1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলো চীনের বাজারে ঝুঁকির মুখে পড়েছে - Dainik Deshbani
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন

পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলো চীনের বাজারে ঝুঁকির মুখে পড়েছে

Maharaj Hossain
  • সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

গত দুই দশকে চীনের গাড়িশিল্প দ্রুত হারে বেড়েছে। বিওয়াইডির মতো ব্র্যান্ডগুলো এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকছে। এই প্রবৃদ্ধির ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে যে তাদের কোম্পানিগুলো চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।

বাস্তবতা হলো, চীনের নিজস্ব বৈদ্যুতিক গাড়ির ধাক্কায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর অবস্থা এখন খুবই শোচনীয়। তারা চীনের বাজারে রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

বেশি দিন আগের কথা নয়, মার্কিন গাড়ি কোম্পানি জেনারেল মোটরসের (জিএম) জন্য চীনের বাজার ছিল সবচেয়ে লাভজনক। কোম্পানিটি যখন উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে রীতিমতো ধুঁকছিল এবং বেইল আউট বা পুনরুদ্ধার কর্মসূচির কথা ভাবছিল, তখন তাদের বাঁচিয়ে দেয় চীনের বাজার। কারণ, তারা চীনে মুনাফা করে যাচ্ছিল।

এখনকার বাস্তবতাটা ঠিক তার বিপরীত। জেনারেল মোটরস এখন ঘরের তথা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করছে বটে, কিন্তু চীনে ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে তারা চীনের বাজারে আর কত দিন টিকতে পারবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রধান কারণ, চীনা কোম্পানিগুলো স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে বাজার সয়লাব করে দিয়েছে। যে ধরনের গাড়ি একসময় মার্কিন কোম্পানিগুলো তৈরি করতে চায়নি, সে ধরনের গাড়ি বানিয়েই চীনারা বাজিমাত করেছে। খবর সিএনএনের

সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে চীনের বাজারে জেনারেল মোটরসের (জিএম) গাড়ি বিক্রি কমেছে ১৯ শতাংশ। চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা যে গাড়ি কারখানা করেছিল, সেটির ক্ষতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৭ মিলিয়ন বা ৩৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে জিএম জানায়, চীনের বাজারে নানাবিধ সমস্যার কারণে তাদের নিট আয় ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার কমতে পারে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এই ৫০০ কোটি ডলারের অর্ধেক ব্যবসা পুনর্গঠন-সংক্রান্ত। বাকি অর্ধেক বাস্তবতার প্রতিফলন। সেটা হলো, চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তাদের আগের অবস্থার চেয়ে ভিন্ন।

অথচ ১৫-২০ বছর আগে চীনা বাজারের মুনাফা দিয়েই চলত জিএম। কিন্তু এখন জিএমসহ বিশ্বের অধিকাংশ গাড়ি কোম্পানি চীনের বাজারে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে জিএমসহ বিশ্বের অন্য দামি গাড়ি কোম্পানিগুলো এখন খতিয়ে দেখছে চীনের বাজারে তারা আর কত দিন টিকতে পারবে।

জিএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেরি বারা সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলো চীনের বাজারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে জিএম নিশ্চিত যে তারা বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারবে, যদিও অন্যরা অতটা নিশ্চিত নয়।

চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলো ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর শুরুর দশকে চীনে কারখানা খুলেছে। এক দশকের মতো সময় তারা ব্যবসা করেছে; কিন্তু এখন তারা রীতিমতো ধুঁকছে।

চীনে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ফলে উন্নত হয়েছে তাদের জীবনযাত্রার মান। একসময় চীনের বাজারে পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলোর বাড়বাড়ন্ত ছিল। কিন্তু এখন চীনা ক্রেতাদের ধারণা, দেশীয় গাড়িই তাঁদের জন্য ভালো। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড প্লাগ-ইন গাড়ি বাজারে আসার কারণে চীনের ক্রেতারা মনে করছেন, পশ্চিমা গাড়ির চেয়ে নিজেদের দেশে তৈরি গাড়িই ভালো।

বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি আসার পর চীনা ক্রেতাদের রুচি বদলে গেছে। ফলে দেশটির বাজারে জনপ্রিয় পশ্চিমা গাড়ি বিক্রি করে তারা বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই কোম্পানিগুলোকে হয়তো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বা তারও আগে চীনের বাজার ছাড়তে হতে পারে।

বাস্তবতা হলো, চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো এখন যত গাড়ি বিক্রি করছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশই করছে দেশের বাজারে। চায়নিজ কার প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, পাঁচ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ, বাজারের বাকি অংশ ছিল বিদেশি কোম্পানিগুলোর দখলে।

জিএম যখন চীনের বাজারে আসে, তখন দেশটির শর্ত ছিল, বিদেশি কোম্পানি কারখানা খুললে তাদের স্থানীয় কোনো কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তা করতে হবে। যেখানে স্থানীয় কোম্পানির অংশীদারি থাকতে হবে অন্তত ৫০ শতাংশ। জিএমের অংশীদারি সাইক কোম্পানির সঙ্গে। তাদের এই অংশীদারি আগামী ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা।

বাস্তবতা হলো, জিএম এই অংশীদারি আর বাড়াবে কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্য পশ্চিমা কোম্পানিগুলোও সেই পথ অনুসরণ করবে।

ইউরোপীয় কোম্পানি স্টেলানটিস চীনের বাজারের জন্য জিপ তৈরি করত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ক্ষতির মুখে থাকার পর ২০২২ সালে কোম্পানিটি চীনে দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন করে। ফোর্ড কোম্পানি এখনো চীনের বাজারে মুনাফা করছে। কিন্তু তাদের গাড়ি যতটা না চীনের বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকাসহ এশিয়ার অন্যান্য বাজারে।

এর আগেও বড় বাজার ছেড়ে আসার রেকর্ড আছে জিএমের। ২০১৭ সালে চীনের বাজার ছেড়ে আসে এই কোম্পানি। এর তিন বছর আগে তারা চীনের বাজার থেকে শেভ্রেলট ব্র্যান্ড প্রত্যাহার করে নেয়।

ইভি বা বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বড় করতে চীনা সরকার নানা প্রণোদনা দিচ্ছে। ক্রেতাদের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিচ্ছে তারা। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পুরোনো গাড়ির পরিবর্তে নতুন পরিবেশবান্ধব গাড়ি কেনার জন্য ২ হাজার ৮০০ ডলার করে ভর্তুকি নেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ আবেদন জমা পড়ছে। পাশাপাশি আরও ছাড় দিচ্ছে চীন সরকার, যেমন করছাড়, বিভিন্ন ধরনের ভাতা; এসব কারণে চীনের বাজারে ইভির চাহিদা বাড়ছে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব