বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তাদের এবং পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষ।
এদিকে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পরিবহন শ্রমিক গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় জটিল হয়ে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের চলমান সড়ক অবরোধের পাল্টা হিসেবে বাস ধর্মঘট ডেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের ১৩ ঘণ্টা আলটিমেটামের পর শনিবার সকালে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলায় দুইজন পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়। অপরদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু আটকে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। এ নিয়ে পুরো বরিশাল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তারা দুজনই নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাউজিং এলাকার বাসিন্দা। গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখে সড়ক অবরোধ করে।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে বিক্ষোভ করে তারা। পাশাপাশি বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বিক্ষোভকালে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
বরিশাল পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় আমাদের শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত না। আমাদের কোনো লোক ছাত্রদের মারধর করেনি। কারা করেছে তাও জানি না। আমরা তাদের ওপর হামলার ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছি। তবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শিক্ষার্থীদের মারধরকারী মূলহোতাদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ও খয়রাবাদ সেতু থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত বরিশাল-কুয়াকাটা আন্ত:মহাসড়ক অবরোধ করে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, এখন পর্যন্ত মূল হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা না হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ছাদিকুল আরেফিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা মামলা দায়ের করেছি। দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে কিন্তু আসল হামলাকারীকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি নুরুল ইসলাম জানান, মধ্যরাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি মেসে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহসিন উদ্দিন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলা দায়েরের পর আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে তাদের দুইজনকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওসি নুরুল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আবুল বাশার রনি ও মো. ফিরোজ হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত ওই দুইজন ছাড়াও হামলার ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় একদিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন। আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সাথে বিআরটিসি বাস কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান।
১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্টান্ড সংলগ্ন সব শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১১ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার পরপরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে কয়েকবার আন্দোলন স্থাগিত করা হলেও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত ছিল।