গাজীপুর মহানগরের অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল-গাজীপুরের সংযোগ স্থলটির নাম চান্দনা চৌরাস্তা।
এলাকাটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সঙ্গতকারণেই দিন-রাত হাজার হাজার মানুষের পদচারণা এখানে। এত মানুষের সেবাদানের জন্য বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনস্থ ‘চান্দনা ডাকঘর- ১৭০২ নামে একটি পোস্ট অফিস রয়েছে।
গাজীপুরে শহরে প্রবেশপথে সড়ক ভবন লাগোয়া অধুনালুপ্ত বাসন ইউনিয়ন পরিষদের একতলা পরিত্যক্ত ওই ভবনে চলছে ডাকসেবা।
সোমবার সরেজমিন ওই পোস্ট অফিসে ডাকসেবা পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত-জরাজীর্ণ একটি কক্ষে দুজন পোস্টম্যান কাজ করছেন।
খবর নিয়ে জানা গেল, ওই ভবনটি বহু আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ওই পরিত্যক্ত ভবনে কেন আছেন জানতে চাইলে পোস্টমাস্টার ফারজানা আক্তার জানান, আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। নানা চেষ্টা-তদবির করে কোথাও ওঠার মতো একটু জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে।
তিনি জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় দূরদূরান্তের পথচারীরা এখানে এসেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন। আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো— ভবনটি অরক্ষিত হওয়ায় এর পেছনেই চলে নিয়মিত পতিতাবৃত্তি।
আর এটি ঘিরে গভীর রাতঅবধি চলে পতিতা-খদ্দের আর ছিনতাইকারীদের আড্ডা। তাই লজ্জা আর দুর্গন্ধে দরজা-জানালা বন্ধ করে নাকেমুখে কাপড় চেপে ফারজানাকে জনগণের জন্য ডাকসেবা দিতে হচ্ছে।
পোস্টমাস্টার ফারজানা আক্তার যুগান্তরকে আরও জানান, অফিসের চারপাশে নোংরা ও বিশ্রি পরিবেশ। অফিসের ভেতরেও নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। যাযাবরের মতো আসি আর কাজ সেরে বাসায় চলে যাই। ভঙ্গুর এ ভবনের ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খুলে খুলে পড়ছে। ছাদে বড় বড় বটগাছ গজিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যেনেও আছি।
স্থানীয় সেবা প্রার্থী মো. আবু হানিফা যুগান্তরকে জানান, পোস্ট অফিসটির অবস্থা এখন যা দেখছেন; কিন্তু বৃষ্টি এলে কক্ষে কোমর পানি জমে, তখন দুর্ভোগের আর অন্ত থাকে না।
ঢাকা উত্তর উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক সালাহউদ্দিন মোহাম্মদ মুসা জানান, আমরা ইতিপূর্বে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পাইনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোছলেউদ্দিন চৌধুরী মুসা জানান, ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক আগেই এটিকে পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এখানে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমি তাদের অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।