নড়াইল জেলায় শীতের আগমনীতে ধুম পড়েছে লেপ-তোশক তৈরির। লেপ-তোশকের কারিগরেরা এখন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এরই মধ্যে কিছুটা শীত পড়ে গেছে। কিছুদিন পরেই জেঁকে বসবে।
এবার কার্তিকের শীতের আমেজ আগেই টের পাওয়ায় জনসাধারণ ভিড় জমাতে শুরু করেছে লেপ-তোশকের দোকানে। তুলা, লেপের কাপড় ফোম এবং মজুরি গত বছরের তুলনায় এবার বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোহাগড়া বাজারের দোকানগুলোতে লেপ-তোশকের ভিড় লক্ষণীয়। এসব দোকানে দিন দিন বেড়েই চলছে লেপ-তোশক ক্রেতাদের ভিড়। পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশক তৈরি কারিগরদের। লোহাগড়া বাজারের লেপ-তোশক তৈরির প্রতিটি দোকানে এখন ১৫-২০টি লেপ-তোশক তৈরি হচ্ছে। এদিকে শীতবস্ত্র বিক্রির দোকানেও ভিড় ও কেনাকাটা জমে উঠতে শুরু করেছে। নড়াইলের লোহাগড়া বাজার আজিবর বেডিং স্টোরের স্বত্বাধিকারী ও কারিগর মো. আজিবর চৌধুরী বলেন, ‘৩০-৩৫ বছর লেপ-তোশক তৈরি ও বিক্রয় করে আসছি। লেপ-তোশক তৈরি করে আজ আমি স্বাবলম্বী। দুই ছেলে, চার মেয়ে তাদের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে সংসারের হাল ধরে আছি এ ব্যবসা থেকেই। মেয়েদের বিবাহ দিয়েছি আর ছেলেরা পড়ালেখা করছে। ইচ্ছে করলেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারিনি। প্রায় শত বছরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হাল ধরে রেখেছি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ৮ জন কারিগর রয়েছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি লেপ তৈরি হয়ে থাকে। ৪-৫ হাত মাপের তৈরি লেপ ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।’ গ্রামবাংলায় একটি প্রবাদ আছে, আশ্বিন মাস এলেই শীতের কারণে মানুষের গা শিরশির করে। কিন্তু কার্তিক মাসের শেষ ভাগ থেকে সকাল হলেই ঘনকুয়াশা আর শীতের আমেজ দেখা যাচ্ছে। সূর্য ওঠার ঘণ্টা দুই পরেই আবার বদলে যাচ্ছে প্রকৃতির এমন রূপ। সন্ধ্যা নামার পরপরই প্রায় সারা রাত মাঝারি শীতের কারণে বাসাবাড়িতে শীত নিবারণের জন্য পাতলা কাঁথা ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মানুষ শীত নিবারণে সাধারণত নির্ভর করেন লেপ-তোশকের ওপর। লেপ-তোশক তৈরির কারিগর মো. মুজিবর চৌধুরী বলেন, ‘আমি ১৫ বছর যাবৎ লেপ-তোশকের কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছি। এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে মন চায় না। বাবার সূত্র ধরেই আমি ১৫ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছি।’ কারিগর মো. অলিয়ার রহমান বলেন, ‘শীত আসার আগেই মানুষ লেপ-তোশক বানাতে শুরু করে দিয়েছে। আমরাও ব্যস্ত সময় পার করছি। শীত বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসা আরও বৃদ্ধি পাবে। মনে হয় এ বছর আয়-রোজগার ভালোই হবে।’ জিবাদ হোসেন বলেন, ‘রাত ১২টা পর্যন্তও আমরা কাজ করেছি। একটা সময়ে হাড়কাঁপুনি শীতেও লেপ-তোশকের দোকানে ভিড় লক্ষণীয় ছিল। আগের তুলনায় এখন অনেক কমে গেছে। তবে শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথেই লেপ তৈরির ধুম পড়বে।’