1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

দ. আফ্রিকায় অপরাধীদের জীবন বদলে দিতে আলেমদের প্রচেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১

স্থানীয় আলেমদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাধ-ভূমি কেপ টাউনের বেশ কিছু এলাকার মাদকাসক্ত ও সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের জীবন বদলে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে ধীরে ধীরে শহরটিতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরার চিত্র তুলে ধরা হয়। কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।

আলেমদের তিন বছরের প্রচেষ্টা : আলেমদের তিন বছরের প্রচেষ্টায় অপরাধীচক্রের জীবনে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এক সময় মানেনবার্গ ও অন্যান্য এলাকা খুবই অস্থিতিশীল ও অপরাধপ্রবণ ছিল। এখন তাতে আগের তুলনায় অপরাধ ও মারামারির মাত্রা অনেকটা কম।

সন্ধাবেলার জিকিরের মজলিস : প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে এশার নামাজের আগ পর্যন্ত কেপ টাউনের খোলা প্রাঙ্গণে ‘জিকিরের মজলিসে’র আয়োজন করেন স্থানীয় আলেমরা। অত্যন্ত সুমধুর সুরে আল্লাহর পবিত্র নামে তাঁরা জিকির করেন।

উপস্থিত থাকেন স্থানীয় খ্রিস্টানরাও : আয়োজক আলেমরা জানান, গত তিন বছর যাবত নামাজ ও এক বা দেড় ঘণ্টা ব্যাপী জিকির চলাকালে এখানের কোনো গোষ্ঠী সংঘাতে জড়ায়নি। সাপ্তাহিক এ আয়োজনে প্রায় চার শত লোক উপস্থিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান সমস্যা যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় দুই হাজার লোক উপস্থিত হন। স্থানীয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও এতে অংশ নেন। জিকিরের মজলিসের বিচিত্র দৃশ্য তাঁরা অবলোকন করেন।

তিন বছর ধারাবাহিক জিকিরের আয়োজন : জিকির অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক শায়খ মুহাম্মাদ সালিক ইসহাক বিবিসিকে বলেন, ‘উপস্থিতির সংখ্যা আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিরাজমান পরিস্থিতিতেও গত তিন বছর যাবত আমরা জিকিরের মজলিস আয়োজন করতে পেরেছি।’

বিশ্বের সব দেশে মুসলিমরা জিকির পাঠ করে। তাদের জিকিরে থাকে নানা ধরনের সুরেলা কণ্ঠস্বর। মিশ্র-এশীয় বংশোদ্ভূত কেপ মালয় জনগোষ্ঠী বংশপরম্পরায় দক্ষিণ আফ্রিকাতে বসবাস করছে। কেপ মালয়েরও অনন্য একটি সুর আছে।

কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল মেনেনবার্গ : ১৯৬০ সালে দেশটির তৎকালীন বর্ণবাদী সরকার আইনের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য পৃথক স্থানের ব্যবস্থা করে। এ সময় নিম্ন আয়ের রঙিন বর্ণের মানুষের জন্য মেনেনবার্গ শহরটি স্থাপিত হয়। সরকারি নথিতে তাদেরকে মিশ্র বংশোদ্ভূত জাতি হিসেবে অবিহিত করা হয়। তখনকার শাসকগোষ্ঠী বৈষম্যমূলক সমাজিক শ্রেণিবিভাগ তৈরি করে এবং নিজেদের জন্য দেশের উর্বর ভূমিতে বসতি স্থাপন করে।

নানা সমস্যায় জর্জরিত মেনেনবার্গ : মেনেনবার্গে বর্তমানে ৫২ হাজারের বেশি লোক বসবাস করে। তাঁদের অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। বেকারত্ব, দারিদ্রতা, অপরাধ ও সংঘবদ্ধ ডাকাতির মাত্রা অত্যন্ত বেশি। বর্তমানে এখানে যুদ্ধবিরতিকাল চলছে। তদুপরি জিকিরের আগে গোলাগুলি সংঘটিত হয় এবং সাপ্তাহিক বিরতিকালে পার্শ্ববর্তী মিচেলস প্লেইন এলাকায় চারজন নিহত হয়।

সহিংসতা ও বর্বরতার শেষ কোথায় : বিরাজমান সহিংসতা শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। কারণ এ সমস্যা সমাধানে সরকার কোনো উদ্যাগ গ্রহণ করছে না। শায়খ ইসহাক বলেন, ‘সমাজের সব ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা স্থাপনের শুভ সূচনা হতে পারে। কারণ অপরাধের কোনো সীমারেখা নেই। কোনো ধর্ম অপরাধের স্বীকৃতি দেয় না।’

এছাড়াও শহরের ঘনবসতি সমস্যার ন্যায্য সমাধান করাও সরকারের কর্তব্য। এজন্য শহরে নতুন বসতি না করে নগরবাসীকে বসতি স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া দরকার। এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যাও বাড়ানো জরুরি।

উপস্থিত সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা : আরেকজন আয়োজক শায়খ সামিউদ্দিন জিকিরে আগত অতিথিদের জন্য কেপ টাউনের প্রচলিত ‘নিয়াজ’ নামের এক ধরনের মিষ্ঠান্ন কেক তৈরি করেন। জিকিরের পর মেনেনবার্গের দরিদ্র মানুষের মধ্যে গরম খাবার বিতরণ করা হয়।

অপরাধীদের জীবনে আলেমদের প্রভাব : ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার মেনেমবার্গ এলাকাকে সর্বাধিক বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। এমনকি ওই সময় পুলিশের প্রহরা ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত শহরে প্রবেশ করতে পারত না।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শায়খ ইসহাক বলেন, সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্যরা অনেক সময় আলেমদেরকে জিকির শুরু হওয়ার আগে জায়নামাজ বিছাতে সহায়তা করেন। ফলে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মেনেনবার্গে জিকির চলাকালে অপরাধের মাত্রা অনেক হ্রাস পেয়েছে।

ইতিবাচক প্রভাবে আলেমদেরকে পুলিশের সহায়তা : সমাজে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করায় জিকির মজলিসের আয়োজকদেরকে মেনেনবার্গের পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহায়তা করা হয়। আয়োজকদের স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হলো, সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। আর সমাজ থেকে মাদকদ্রব্য ও সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রকে সমূলে নির্মূল করা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য।

জিকিরে শিশুদের অংশগ্রহণ : এখন স্থানীয় শিশুদেরকে মাদকদ্রব্যের কুফল নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। মাদকাসক্ত বা অপরাধ চক্রে যে যুক্ত না হতে তাদেরকে জিকিরের মজলিসে বসতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। স্থানীয় খ্রিস্টানরাও এ ধরনের আয়োজনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। এ আয়োজন মুসলিমদেরকে শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত করছে।

শান্তি ফেরাতে জিকির মজলিসের ভূমিকা : প্রতি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ধর্মীয় আলোচনার জন্য একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে আলোচনা করেন।

শায়খ ইসহাক বলেন, মেনেনবার্গ শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে জিকিরের মজলিস অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। আমরা সপ্তাহে একদিন তা আয়োজন করি। তা প্রতিদিন করা গেলে সমাজে এর প্রভাব আরও বেশি হবে। কিন্তু কিছু কারণে আমরা তা করতে পারি না।’

সূত্র : বিবিসি

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব