রাজধানী ছেড়ে আসা মানুষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড় করছে। অধিকাংশ মানুষ মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারের মতো ছোট গাড়িতে করে আসছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষকে ছোট গাড়িতে করে আসতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, লঞ্চঘাট বন্ধ রয়েছে। ঘাটের স্টাফদের পাশাপাশি হকার, শ্রমিক কাউকে লঞ্চঘাট এলাকায় দেখা যায়নি। সুনসান অবস্থায় ফাঁকা ঘাটটি পড়ে আছে। স্থানীয় কয়েকজন বড়শি দিয়ে পন্টুনে বসে মাছ শিকার করছেন। পন্টুনের এক পাশে বসে কয়েকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
ফেরিঘাটে দেখা যায়, স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগত অনেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্র, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল ভিড় করে আছে। ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়ে আসা যাত্রীরা এ ধরনের যানবাহনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ছুটছে। এ সময় কয়েক যাত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকার অজুহাতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় সব কটি ফেরি চলাচল করতে দেখা যায়। পাটুরিয়া ঘাট ছেড়ে অধিকাংশ ফেরিগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে যাত্রীর চাপ দেখা যায়।
মানিকগঞ্জ থেকে ফরিদপুর বোয়ালমারীর নিজের বাড়ি ফিরছিলেন গৃহবধু আনোয়ারা বেগম। সঙ্গে ছোট মেয়ে ও নাতি। দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের রাস্তার এক পাশে ব্যাগ ও নাতি-সন্তান নিয়ে পরিবহনের জন্য বসে আছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে তিনি মানিকগঞ্জে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
বোয়ালমারী যেতে অটোরিকশায় একেকজনের ভাড়া চাচ্ছে ৪০০ টাকা। ৩ জন মিলে ৯০০ টাকা ভাড়া দিতে চাইলেও রাজি হচ্ছে না। এ জন্য তিনি বসে আছেন। প্রশ্ন করলেন, ‘এত ভাড়া দিয়ে কি যাওয়া যায়?’
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলায় ব্যস্ত শ্রমিক শাহ আলম বলেন, তিনি গণপরিবহনের যাত্রী তোলার কাজ করেন। বিনিময়ে পরিবহন থেকে জনপ্রতি যাত্রী বাবদ নির্ধারিত অঙ্কের টাকা পান। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ফেরিঘাটে এসেছেন মাইক্রোবাসে যাত্রী তুলে দিতে। তার মতো এ রকম অনেকে ঘাটে যাত্রী তোলার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘এক মাসের বেশি দিন ধরে বেকার হয়ে বসে আছি। উপায় না পেয়ে ফেরিঘাটে আসা যাত্রীদের মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে তুলে দিচ্ছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি ভাড়া আদায় হচ্ছে।’
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে মাগুরায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল হক বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি দিতে যাচ্ছি। গণপরিবহন না থাকায় নিজের মোটরসাইকেলে করে ভোরে সাহ্রি খেয়ে রওয়ানা হয়েছি। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মোটরসাইকেলে এলেও ফেরিতে এসে দেখি মানুষের ভিড়। ভিড়ের মধ্যে অনেক কষ্ট সহ্য করে নদী পাড়ি দিতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, ঈদ করতে অনেকে আগেভাগে পরিবার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দিতে ছুটছেন। রাজধানী ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী অধিকাংশ যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছুটছেন। এ কারণে পাটুরিয়া ঘাটে ছোট গাড়ির চাপ রয়েছে। এসব গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করতে ছোট ফেরির সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বড় ফেরিও চলছে।