1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে চিরবিদায় জানানোর পথে হাঁটলো কলকাতা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

১৫১ বছর বয়সে অবশেষে বিদায়! বিদায় নিলো কলকাতার আবেগ, ঐতিহ্য, ভালোবাসার ট্রাম। কলকাতার রাস্তার ওপর জীবন রেখার মতো ট্রাম লাইনগুলো পাতা রয়েছে; কবিতা থেকে গল্প, উপন্যাস থেকে সিনেমা কলকাতা মানেই যেন ট্রাম। সেই কলকাতায় বর্তমান গতির যুগে বড্ড বেমানান ট্রাম, শ্লথ গতি, ছোট চেহারা, দূষণহীন পরিবহন এসবই যেন বড় বিড়ম্বনার কারণ। তাই শেষমেশ বিদায় নিল সে। হারিয়ে গেল শহর থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন দপ্তর দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকার ট্রাম পরিচালনায় আর আগ্রহী নয়। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পরে শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও শ্যামবাজার-ধর্মতলা রুটে শেষ যে দুটি ট্রাম চলত, তাও বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

সম্প্রতি কলকাতা শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। তাতেই সরকারের ট্রামনীতি জানতে চেয়েছিল আদালত। এ বিষয়ে সোমবার পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘কোর্ট এই নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, ময়দান-ধর্মতলা ছাড়া বাকি কোনো রুটে ট্রাম চলবে না। লাইনও তুলে ফেলব। রাস্তা বাড়েনি। যান বেড়েছে। তাই যানজট হচ্ছে। এভাবে ট্রান চালানো অসম্ভব।’

তবে মন্ত্রী জানান, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন ট্রামযাত্রা। সেটি বাদ দিয়ে শহরের বাকি সব ট্রামলাইনও এবার তুলে ফেলা হবে।

কলকাতায় প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, ট্রামলাইনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটার। তার ওপর ট্রামের গুরুত্বও বর্তমানে প্রায় নেই। বরং যানজট বাড়ায় তার শ্লথ গতি ও বড় চেহারা। তার ওপর জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। ফলে এমনিতেই যান নিয়ন্ত্রণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে রাস্তার ওপর ট্রামলাইন যেন আরও সমস্যা বাড়ায়। তাই সবদিক ভেবেই এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ল।

এক সময় কলকাতায় গমগম করে ট্রাম চলত ২৭-২৮টি রুটে। বছর ১৫ আগেও এক ডজন রুটে সচল ছিল ট্রাম। ট্রামের টিংটিং ঘণ্টিতে, কাঠের সিটে, শেষ আসনে বসে খাওয়া বাদামভাজার খোলসে যে কত সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না জমে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম চলে না। তাই এই ট্রাম শুধু কলকাতার গর্বের ঐতিহ্য নয়, নস্টালজিয়াও। আজ সেই ট্রাম ফেয়ারওয়েলের মঞ্চে। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

একটা সময় সব থেকে জনপ্রিয় গণপরিবাহনের মাধ্যম হওয়ার কারণে ট্রামের সুখ্যাতি ছিল প্রচুর। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় উপমহাদেশের কলকাতা শহরে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয়। পথ আর্মেনিয়া ঘাট থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত (বর্তমান মল্লিক ঘাট এবং বিবাদীবাগ চক্র রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী একটি ঘাট)। পথের দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৯ কিলোমিটার, সেকালের হিসেবে ২.৪ মাইল। একটি বগির এক ঘোড়ায় টানা সরকারি যান। প্রথমে, ৩ ফুট চওড়া ট্রাম লাইন পাতা হয়, পরে ১৯০২ সালে লাইন আরও চওড়া হয়ে ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া করা হয়। কিন্তু বেশিদিন চলেনি এই গাড়ি। যদিও ঘোড়ার ভরণপোষণের উচ্চমূল্য ও যাত্রীর অভাবে এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।

পরে বিলেতে বিধিবদ্ধ ট্রাম কোম্পানি তৈরি হয় এবং ১৯০২-০৩ সালে কলকাতা শহরেই প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম গাড়ির চলাচল আরম্ভ হয়। এই ট্রাম লাইন ছিল এশিয়ার বুকে প্রথম। ‘ক্যালকাটা ট্রামএজ কোম্পানির (লন্ডন)’ তত্ত্বাবধনায় কলকাতায় ট্রাম পরিষেবা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন দপ্তরের হাতে যায় কলকাতার ট্রাম।

স্বাধীনতার পরেও ঐতিহ্যের সাথে ট্রাম নিজের যাত্রা পথে চলেছে বহুদিন। ১৯৯৯ সালে বামফ্রন্ট সরকার, এশিয়ার আদিতম এবং একমাত্র ট্রাম লাইন সংস্করণের কাজ শুরু করে। একাধিক রুটে ট্রাম বাড়ানো হয় এবং একাধিক নতুন রুট তৈরি করার ভাবনা চিন্তা করা হয়। সময়ের সাথে ট্রাম এর ইঞ্জিন এবং টেকনোলজি পরিবর্তন আনা হয়েছিল সেই সময়। সে সময় কলকাতার প্রায় ৩৭টি রুটে চলত ট্রাম পরিষেবা।

২০১২ সালের পরবর্তী সময় থেকে একে একে কলকাতা শহরের ট্রাম গ্রুপগুলি বন্ধ হতে থাকে। ৩৭টি ট্রাম রুটের মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে তিনটি রুট সক্রিয় হয়ে থাকে। অত্যাবশকীয় গণপরিবহন মাধ্যম থেকে ট্রাম হয়ে যায় বিনোদনমূলক টুরিস্ট ভ্যাকেইল। আস্তে আস্তে তার অস্তিত্ব মুছে যায় ২০২২ সালে। আজ ১৫০ বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে কলকাতা শহরে ট্রাম রুট কমতে কমতে দাড়িয়েছিল মাত্র ২টিতে। । কলকাতার ইতিহাস বয়ে চলা ট্রাম নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রশাসনের বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণণ নেতিবাচক। ট্রাম নাকি আধুনিক কলকাতার রাস্তায় বেমানান এবং যানজটের মূল কারণ। তাই কলকাতা শহরের একাধিক ট্রাম লাইন এর ওপর চুন-সুরকি-কালো পিচ দিয়ে চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির নামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ট্রাম ডিপোর কোটি কোটি টাকার জমি। সরকারি সহযোগিতায় কোথাও কোথাও ট্রাম ডিপোর জমি দখল করে গজিয়ে উঠেছে বহুতল আবাসন, ঝা চকচকে শপিংমল কিংবা সরকারি দলের দলীয় কার্যালয়। কলকাতার স্থানীয় নাগরিকদের অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি দলের নেতারা জড়িত এসব প্রমোটিংয়ের ব্যবসায়। আর তাদের সুবিধা দিতেই ট্রাম তুলে দেয়ার সব ধরনের বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব