কদিন আগেই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নিয়ন্ত্রিত প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের পাশ ঘেঁষে চলে যায় মার্কিন রণতরি ইউএসএস জন এস ম্যাককেইন। এবার সেখানে যৌথ মহড়া দিল বিমানবাহী মার্কিন রণতরি থিওডর রুজভেল্ট ও নিমিটজ।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল মঙ্গলবার এ মহড়া চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে মহড়া চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য এই মহড়া চালানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের জুলাই মাসের পর থেকে ব্যস্ত জলপথের মধ্যে দুটি রণতরি ব্যবহার করে মহড়া দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
চীনের দাবি করা জলসীমায় মার্কিন রণতরি জন এস ম্যাককেইন অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছে। এ ঘটনায় চীনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়। তারা মার্কিন ওই যুদ্ধজাহাজকে সতর্ক করে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি করে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিমানবাহী মার্কিন রণতরি মহড়া শুরু করে।
মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সমুদ্রপথে স্বাধীন অভিযানের অংশ হিসেবে ওই পথ ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন যুদ্ধজাহাজের এ ধরনের অভিযান ছিল এটাই প্রথম।
বেইজিং বলছে, তাদের সার্বভৌমত্ব অখণ্ডনীয় এবং ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা চাপিয়ে দিচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের পুরো মালিকানা নিজের বলে দাবি করে চীন। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো এটা মানতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামের মতো প্রতিবেশীদের ভয় দেখাচ্ছে চীন। চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ দিন দিন বাড়ছে। চীনের দখলে থাকলেও দক্ষিণ চীন সাগরের প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে আসছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন।
রণতরি নিমিটজের স্ট্রাইক গ্রুপের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল জিম কার্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সব দেশের জন্য সমুদ্রের বৈধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিমানবাহী মার্কিন রণতরি ইউএসএস নিমিটজ
বিমানবাহী মার্কিন রণতরি ইউএসএস নিমিটজ ছবি: রয়টার্স
চীন নিয়ন্ত্রিত এই দ্বীপের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার অভিযানের ফলে ক্ষুব্ধ চীন।
বেইজিং বলছে, তাদের সার্বভৌমত্ব অখণ্ডনীয় এবং ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা চাপিয়ে দিচ্ছে। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার ভালো পরিবেশকে ব্যাহত করছে।’
১৯৭৪ সালে ভিয়েতনামের সেনাদের সঙ্গে ছোট এক যুদ্ধের পর প্যারাসেল দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেয় চীন। ভিয়েতনাম ও চীন এখনো দ্বীপটি নিজেদের বলে দাবি করে।
মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ফিলিপাইন দক্ষিণ চীন সাগরের অন্য অংশ নিজেদের বলে দাবি করে। তবে সেখানে চীন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির পাশাপাশি বিমানঘাঁটি তৈরি করছে।
এর আগে মার্কিন রণতরির চীনের আপত্তি উপেক্ষা করে তাইওয়ান প্রণালি পাড়ি দিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।