ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনের বিরুদ্ধে নতুন হুমকি নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন। এই আবহে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং মনে করেন যে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের সম্পর্কের মধ্যে যদি সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে বিপর্যয় নেমে আসবে সেই সঙ্গে বাকি বিশ্বকে কোনো এক পক্ষকে বেছে নিতে হবে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে তিনি কি ভাবছেন? স্থানীয় সংবাদপত্র স্ট্রেইট টাইমসের খবর মোতাবেক, ওং মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতা করলেও, তাদের দু’জনেই কেউই যুদ্ধ চায় না।
তবুও তিনি সতর্ক করেছিলেন যে ‘সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলিকে মার্কিন ব্লক বা চীন ব্লকে যোগদান করতে বাধ্য করা উচিত নয়। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।’
ওং যোগ করেছেন-দক্ষিণ চীন সাগর বা তাইওয়ান প্রণালীর মতো ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। বেইজিং প্রায় সমস্ত দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করে, যা ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে চীনের আঞ্চলিক বিরোধের কারণ। সা¤প্রতিক বছরগুলিতে, চীন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে বা প্রতিযোগী দেশগুলির জাহাজগুলিকে হয়রানির মধ্যে ফেলে তার দাবিগুলিকে জোরালো করার চেষ্টা করছে।
ওয়াশিংটন প্রায়শই ফিলিপাইনের পাশে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এসেছে। বেইজিংয়ের দাবিকে উড়িয়ে দিতে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর চলাচলও ইদানিং বেড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়ের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ ওয়াশিংটনের সাথে শক্তিশালী নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রাখে, তবুও চীন এই অঞ্চলের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সতর্কতা সত্তে¡ও, ওং মনে করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক ততটা খারাপ পর্যায়ে যাবে না যাতে “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ” শুরু হতে পারে। আরেকটি স্থানীয় আউটলেট মাদারশিপ এসজি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং বলেছেন-‘যুক্তরাষ্ট্র যদি চীন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তবে তা মার্কিন অর্থনীতি এবং আমেরিকান নাগরিকদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জনগণের জন্য যা আমদানি করে তার বেশির ভাগই চীন থেকে আসে। তাই এই পর্যায়ে দু’দেশের সম্পর্কের সম্পূর্ণ অবনতি ঘটবে বলে অন্তত আমার মনে হয় না।’
দায়িত্ব নেবার পর ১ ফেব্র“য়ারি থেকে চীনা পণ্যের উপর নতুন ১০% শুল্কের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ হবে।
বুধবার, চীনা কর্মকর্তারা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে “বাণিজ্য বা শুল্ক যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হতে পারে না।” বৈশ্বিক সংস্থাগুলি তাদের সরবরাহ চেইনের জন্য চীনের উপর নির্ভর করে চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে চীন এখনও একমাত্র দেশ যা মাদারবোর্ড এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো জটিল পণ্যগুলি কম খরচে তৈরি করতে পারে। মার্কিন খুচরা বিক্রেতারাও সস্তা আমদানির জন্য চীনের উপর নির্ভর করে।
সূত্র : ফরচুন।