ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর আওতাধীন ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোর চারপাশে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহলের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখন থেকে থানার আশপাশে ঘোরাফেরা করবে পুলিশের মোবাইল টিম।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনায় হামলার ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা শহরের বেশকিছু থানাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সেগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বুধবার বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থানাসহ পুলিশের অন্যান্য স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সিলেটের থানাগুলোয় বালুর বস্তা দিয়ে বাঙ্কার তৈরি করে মেশিনগান বসানো হয়। ঢাকার থানাগুলো তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) থেকে ঢাকার থানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। থানায় প্রতিটি মানুষকে ঢোকার আগে তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত ও তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া থানায় পুলিশের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। তবে সব থানায় নয়, অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দর, বাড্ডা, বংশাল, চকবাজার, দারুস সালাম, গুলশান, হাতিরঝিল, যাত্রাবাড়ী, কলাবাগান, খিলগাঁও, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, পল্টন, রমনা মডেল, নিউমার্কেট, শাহবাগ, সূত্রাপুর, ভাটারা, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ প্রায় ৩০টি থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি ইতোমধ্যে থানাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোয় সবসময় একটা মোবাইল টিম দায়িত্বে থাকবে। ওই টিম সারাদিন থানার আশপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করবে। তারা কখনও থানা থেকে বেশি দূরে যাবে না। টহল দেবে ২৪ ঘণ্টা। থানায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে আগে একজন সেন্ট্রি ছিল। এখন একসঙ্গে ২ জন সেন্ট্রি দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি থানায় একসঙ্গে মোট ৬ জন সেন্ট্রি অবস্থান করবে। দুজন ডিউটি করবে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাকিরা স্ট্যান্ডবাই থাকবে।’
চেকপোস্ট করা হবে কি না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, তারা তো (হেফাজত) সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছে। একজন-দুজন এসে হামলা চালালে চেকপোস্টে কাজ হতো। তবে আমরা থানাগুলোকে নিরাপদ করছি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ রোববার হেফাজতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় হরতাল-সমর্থকরা। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি অস্ত্র। ওই হামলাকারীদের মধ্যে ছিল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোর। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত দুজনের একজন শিশু। আহতদের মধ্যেও কয়েকটি শিশু ছিল। হামলাকারীরা থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে রাখা সাঁজোয়া গাড়িতে (এপিসি) আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে হামলাকারীরা থানার সরকারি দুটি পিকআপ ভ্যান ও ২০ টনের ১টি রেকার পুড়িয়ে দেয়। থানার সামনে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে রাখা ২টি লেগুনা, ২টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১০-১২টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। পরে থানা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।