আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের যে আধিপত্য তা খর্ব করে ব্রিকস জোট যদি অন্য কোনো মুদ্রাকে সামনে আনতে চায়, তাহলে তাদের রপ্তানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে ফের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ডলারকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করবে আর যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, সেই সময় পার হয়ে গেছে।
এনডিটিভি লিখেছে, ডলার নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চীন-রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবেই তার অবস্থান ব্যক্ত করে আসছেন।
নভেম্বরেও তিনি এ নিয়ে ব্রিকসকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। শুক্রবারও তার লেখায় ছিল একই সুর।
“আপাতদৃষ্টিতে বৈরি এই দেশগুলোর কাছ থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে হবে যেন তারা নতুন ব্রিকস মুদ্রা সৃষ্টি না করে কিংবা এমন কোনো মুদ্রাকে পৃষ্ঠপোষকতা না দেয় যেটা শক্তিশালী মার্কিন ডলারের জায়গা নিতে পারে। তা নাহলে তাদের ১০০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে, এবং চমৎকার মার্কিন অর্থনীতিতে পণ্য বিক্রির আশা ছেড়ে দিতে পারে।
“তারা ধোঁকা দিতে পারে এমন নতুন দেশ খুঁজে নিক। ব্রিকস আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা অন্য কোথাও মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করতে পারবে, এমন কোনো সম্ভাবনাই নেই। যেসব দেশ এ ধরনের চেষ্টা করবে তারা শুল্ককে হ্যালো আর আমেরিকাকে গুডবাই বলতে পারে,” লিখেছেন ট্রাম্প।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে গড়া জোট ব্রিকসের সদস্যভুক্ত দেশের সংখ্যা এখন ১০, সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া এতে যুক্ত হয়েছে।
জোটটির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার সাঁড়াশি আক্রমণের পর মস্কোর ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় এই তৎপরতা আরও জোরদার হয়।
তারা এখন পর্যন্ত কোনো কমন মুদ্রা না বেছে নিলেও সদস্যদের মধ্যে নিজ নিজ মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে এত কিছুর পরও মার্কিন ডলার এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রিজার্ভ মুদ্রা। বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব এখনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি বলে গত বছর আটলান্টিক কাউন্সিলের জিওইকোনমিক্সের এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
ট্রাম্পের হুমকিই বলছে, তিনি এ আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চান। এজন্য তিনি যে অস্ত্র হিসেবে শুল্ককেই ব্যবহার করতে চাইছেন, তাও অভাবিত নয়।
তবে তার এই অস্ত্র শেষ পর্যন্ত কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বেশ সন্দিহান।
শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকান ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে যেসব শিল্প আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল তাদের খরচ বেড়ে যেতে পারে, শঙ্কা তাদের।