1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

ট্রাম্প এখন কী বলবেন

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২১

মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে গত ৩ নভেম্বর। এখন দেশটিতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক ঘিরে নানা কর্ম উদ্দীপনা থাকার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ ‘ভোট জালিয়াতি’ ও ‘নির্বাচন লুটের’ ডেমোক্রেটিক ষড়যন্ত্রের কথা বলে নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব দ্য স্টেটের সঙ্গে তাঁর যে ফোনালাপ এখন ফাঁস হলো, তাতে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তাঁর নামটিই সামনে চলে এল।

নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটকে চাপ দিয়েছিলেন, তিনি যেন যেখান থেকে খুশি ভোট খুঁজে বের করেন। এই ভোটের সংখ্যা এমন হতে হবে, যাতে তিনি জো বাইডেনকে পরাজিত করতে পারেন। এ সম্পর্কিত ফোনালাপের অডিও ক্লিপ হাতে পেয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তার আগেই অবশ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই ফোনালাপে এটা স্পষ্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একনায়কের মতো আচরণ করছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই একনায়কের মতো আচরণ অবশ্য অনেক আগেই প্রকাশিত। কিন্তু এতটা খোলাখুলিভাবে তা কখনোই সামনে আসেনি। জর্জিয়ার সিনেট পুনর্নির্বাচনের আগে আগে এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়াটা তাই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ফোনালাপ এত দিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের তরফ থেকে তোলা ‘ভোট জালিয়াতি’, ‘নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন’ প্রভৃতি অভিযোগকে রীতিমতো হাস্যকর করে তুলেছে।

আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল ভোট প্রত্যয়নের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয়ের প্রত্যয়ন করার কথা কংগ্রেসের উভয় কক্ষের আইনপ্রণেতাদের। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ইলেকটোরাল ভোট বদলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন আগে। এখন শেষ চেষ্টা হিসেবে উভয় কক্ষের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের একটি বড় অংশকে নিজের দলে ভিড়িয়েছেন, যারা ৬ জানুয়ারি যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনের জয়কে চ্যালেঞ্জ জানাবেন বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন। বিশেষত ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত সুইং স্টেটগুলোর ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না এই চ্যালেঞ্জ জানানোর যুক্তি হিসেবে তাঁরা ওই বহুল কথিত ‘ভোট জালিয়াতি’, ‘নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন’-এর মতো অভিযোগগুলো পুনরুত্থাপন করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই অভিযোগগুলো বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকেই ফিরে যায়। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা পন্থায় মসনদে থাকতে চাইছেন। তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা এ ক্ষেত্রে এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও নিজেদের রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎকেও আমলে নিচ্ছেন না।

আগামীকাল ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনে পুনর্নির্বাচন হবে। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি এই দুটি আসনের ওপর নির্ভর করছে। এ দুই আসনে রিপাবলিকানরা পরাজিত হলে, সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলবে দলটি। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের হাতে চলে যাওয়ায় দল হিসেবেই তখন রিপাবলিকান পার্টি বিপাকে পড়ে যাবে। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সম্ভবত রিপাবলিকান দলের কিছু নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে। এতে জর্জিয়ায় ভোটারদের ওপর বড় প্রভাব পড়বে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়ার নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ দলের নেতাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্তিগত কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি এই সমীকরণে বসে নিজের হোয়াইট হাউসে থাকার ইচ্ছার পক্ষে এক ধরনের সমর্থন আদায় করছেন রিপাবলিকান নেতাদের কাছ থেকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনের ভাগ্য এখনো ঝুলে না থাকলে এতজন রিপাবলিকান নেতাকে ট্রাম্প তাঁর পাশে পেতেন না। শুধু এই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ই নয়, আগামী প্রশাসনকে সব দিক থেকেই অস্থিতিশীল করতে এমনকি সহিংসতা উসকে দিতেও পিছপা হচ্ছেন না তিনি। আগামী মঙ্গলবার যখন জো বাইডেনের জয় প্রত্যয়নের জন্য কংগ্রেস যৌথ অধিবেশনে বসবে, তখন ওয়াশিংটনের বাইরে বিক্ষোভ করতে সমবেত হবেন ট্রাম্প সমর্থকেরা। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ জটিল হবে। যদিও পরিস্থিতিটি তিনিই তৈরি করেছেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিতেই তাঁর সমর্থকেরা ওয়াশিংটনে আসছেন।

আজকের আগ পর্যন্ত শুধু এ বিষয়গুলোই আলোচনায় ছিল। নিজের কট্টর সমর্থকেরা তাঁর কথা ছাড়া আর কিছু বিশ্বাস করে না—এটা ট্রাম্প জানতেন। তিনি চেয়েছিলেন, সামগ্রিকভাবে ভোটারদের মনে মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে। সে বিষয়ে তিনি সফলও হয়েছেন অনেকাংশে। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট যখন জর্জিয়ার ভোটের ফল বদলে দিতে সেখানকার সেক্রেটারি অব স্টেটকে ফোন করে ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের কথা জানাল, তখন সবাইকে নড়েচড়ে বসতে হলো। কারণ, এত দিন ট্রাম্প অন্যের দিকে আঙুল তাক করে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। কিন্তু এবার আঙুলটি তাঁর দিকেই ঘুরে গেল।

সিএনএন জানায়, জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ভোট খুঁজে বের করুন—আমি শুধু এটাই চাই।’ এই চাপ তিনি এমনকি তাঁর নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার আগে থেকেই দিতে শুরু করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমি শুধু এটাই চাই। আমি চাই, ১১ হাজার ৭৮০ ভোট, যেন আমরা জয় পাই।’
বিজ্ঞাপন

এই একটি বাক্যই ট্রাম্পের ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ বহন করে। একই সঙ্গে এটি আইনি প্রশ্নও তুলে দেয়। এক ঘণ্টাব্যাপী সেই ফোনকলে রাফেনসপারজারকে ট্রাম্প বারবার একটি কথাই বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন, নির্বাচনে সত্যিই জাল ভোট পড়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর নামে পড়া কিছু ভোট নষ্ট করা হয়েছে। আর বিপরীত দিক থেকে বাইডেনকে এমনকি মৃত ব্যক্তিরাও ভোট দিয়েছেন। এমনকি অন্য অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা এসেও বাইডেনকে ভোট দিয়ে গেছেন। উত্তরে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট শুধু বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ভুল তথ্য পেয়েছেন।

জর্জিয়ায় বাইডেন ট্রাম্প থেকে অল্প কিছু ভোট বেশি পেয়ে জয় পান। অন্য সুইং স্টেটগুলোর মতোই বাইডেনের ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্সি জয়ের পথে জর্জিয়ার ১৬ ইলেকটোরাল ভোট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফলে ট্রাম্প এই অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফল বদলে দিতে উঠেপড়ে লাগেন। মামলা থেকে শুরু করে সব পথই ধরেন। কিন্তু সেসব নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও কারও পিলে চমকে ওঠেনি।

কারণ, সেসবই ছিল আইনি পথ। কিন্তু যে ফোনকল ফাঁস হলো, তা সবাইকে চমকে দিয়েছে। কারণ এটি ঠিক সেই ধরনের আচরণ, যার জন্য নির্বাচনের আগে আগে অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেখানেও একটি ফোনকলের ঘটনাই মুখ্য ছিল। সেই ফোনকলটি ছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে, যেখানে ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা তহবিল আটকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন, তিনি যেন বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা জাগিয়ে তোলেন। সেখানেও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এক মিট রমনি ছাড়া বাকি সব রিপাবলিকান সিনেটর একযোগে ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে ট্রাম্পকে অফিস ত্যাগে বাধ্য হতে হয়নি।

কিন্তু তাতেও ট্রাম্প শোধরাননি নিজেকে। তিনি চাপ প্রয়োগ করেই শুধু ক্ষান্ত হননি। রাফেনসপারজারকে করা ফোনকলে ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন, তিনি যেন ঘোষণা দেন, ভোট পুনর্গণনা করে তিনি দেখেছেন প্রেসিডেন্ট বিজয়ী হয়েছেন। এটি না করলে এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তিনি। খুব সাদা চোখেই এটি প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমতার অপব্যবহার, যা স্বাভাবিক সময়েই অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।

ট্রাম্পের এই ফোনকলের অডিও ফাঁসের মাধ্যমে এখন কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। গত বুধবার মিসৌরি সিনেটর জশ হলির কাছ থেকে জো বাইডেনের জয়ের বিরোধিতা করার ঘোষণা আসার পর থেকেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। তারপর তাঁর সঙ্গে একের পর এক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা যোগ দিতে শুরু করলে উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে। কিন্তু এ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকে কেউ কিছু বলছিল না। এখন ট্রাম্পের ফোনকলের অডিও ফাঁসের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সব মহলের তোপের মুখে রয়েছেন এখন রিপাবলিকান নেতারা। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যে আস্থার সংকট দেখা গিয়েছিল, তাও এখন কমতে শুরু করেছে। কারণ, ষড়যন্ত্রের কথা বলে সমবেদনা আদায় করে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই এখন ষড়যন্ত্রীদের শীর্ষ স্থানটিতে রয়েছেন। ফলে তাঁর করা অভিযোগগুলো এবার জনপরিসরেই ভিত্তি হারাচ্ছে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব