যুব সমাজ ও তরুণদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার লক্ষ্যে বিগো লাইভ, টিকটক, লাইকির মতো মোবাইল ফোন অ্যাপ বন্ধ বা নিষিদ্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন এ রিট দায়ের করেন।
এসব মোবাইল ফোন অ্যাপ বন্ধে ও নিষিদ্ধে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং একইসঙ্গে কেন আ্যপগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব; তথ্য মন্ত্রণালয় সচিব; বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ও পুলিশের আইজিকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, এইসব অ্যাপের ব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ বা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস। তরুণ সমাজ এসব অ্যাপের মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায় এবং নিজেকে জনপ্রিয় ভাবতে শুরু করে।
আরও বলা হয়, বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ ও যুবকদের টার্গেট করে লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক তরুণ। এ অ্যাপটি মূলত একটি লাইভ স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম, যেখানে একজন ব্যবহারকারী তার অনুসারীদের সঙ্গে লাইভে মুহূর্ত শেয়ার করেন। এই অ্যাপের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে ভারত ও পাকিস্তান এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিকটক আ্যপের মাধ্যমে অনেক কিশোর- তরুণ উদ্ভট রঙে চুল রাঙিয়ে এবং ভিনদেশী অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে ভিডিও তৈরি করছে, যাতে সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট থাকে। অশ্লীল পোশাক পরে তরুণীরা টিকটকের অশ্লীল ভিডিওতে নাচ, গান ও অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেদের ধুমপান ও সিসা গ্রহণ করার ভিডিও আপলোড করেছে। উদ্বেগজনক যে এ টিকটক ভিডিওগুলোতে নেই কোনও শিক্ষনীয় বার্তা। উল্টো এ সব ভিডিওর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা চলে যাচ্ছে। বিব্রতকর, অনৈতিক ও অশ্লীল ভিডিও যা পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করায় ইতোমধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই আ্যপগুলোর মধ্যে এক ধরনের শো-অফ বিষয় থাকে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এ শর্ট ভিডিও ক্রিয়েশন এবং শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে তরুণ প্রজন্ম অশ্লীল ভিডিও ছড়াচ্ছে। এসব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে একদিকে যেমন তরুণ সমাজ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে তাদের পড়ালেখাও চরম হুমকির মুখে পড়ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে একই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য গত ৮ অক্টোবর সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। তবে সে নোটিশের জবাব না পেয়ে রিটটি দায়ের করলেন আইনজীবী জেআর খান রবিন।