পুরো একবছর অক্সিজেন সেবা দিয়েছে তারা। ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগানে কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে ২৫ জুন। গত এক বছরে ‘জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিস’ থেকে সেবা পেয়েছেন সাত হাজার ৬৫০ জন। শুরুতে শুধু করোনা রোগীর জন্য সেবা চালু থাকলেও বর্তমানে যেকোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র দেখিয়ে এই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে চলে এ কার্যক্রম। ৩ আগস্ট ফেনী জেলার মাধ্যমে শুরু হয় জেলাভিত্তিক কার্যক্রম।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু। আক্রান্ত রোগীর অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অন্যতম। এরই মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে অক্সিজেনের দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।
এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণ শুরু করেন বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবার কার্যক্রম। মাত্র ছয়টি সিলিন্ডার দিয়ে শুরু হওয়া এই মানবিক কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়- ‘জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিস’।
এই মানবিক কার্যক্রমে সাদের সঙ্গী ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ। সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সাদের পরিবারের সবাই হয়েছিলেন করোনা আক্রান্ত। কিন্তু থেমে থাকেননি তারা। মানবিক কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন এখনো পর্যন্ত।
তারা জানান, ২০২০ সালের ২৫ জুন রাজধানীতে শুরু হয় এই সেবা। এরপর ২৫ ও ২৯ জুলাই আরো দু’টি বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে কার্যক্রম শুরু করেন তারা।
একই বছরের ৬ আগস্ট শুরু হয় কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ কার্যক্রম। ৩ আগস্ট ফেনী জেলার মাধ্যমে শুরু হয় জেলাভিত্তিক কার্যক্রম। এরপর ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় ও ২৬ নভেম্বর শুরু হয় বগুড়া জেলায় অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম। বর্তমানে কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ এবং খুলনায় এ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া কুরিয়ারে সারাদেশেই পাঠানো হচ্ছে অক্সিজেন সেবা।
সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমরা গতবছর ২৫ জুন থেকে চালু করি বিনামূল্যে জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা। তখন আসলে পরিস্থিতি বর্তমানের মতো ছিল না। চারদিকে করোনা নিয়ে মারাত্মক ভীতি ছিল। আমরা যখন অক্সিজেন নিয়ে কারো বাসায় যেতাম, তখন আশপাশের বাসা থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। তবে সময় পাল্টেছে। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই সময়টা আমাদের জন্য সংগ্রামের। মানুষের পাশে থাকার সংগ্রাম। মানুষের ভালোবাসার জন্যই এই সংগ্রামের পথ আমরা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে আনন্দ যেমন দেখেছি, ঠিক তেমনি আর্তনাদের সাক্ষী হয়েছি। অন্যের প্রিয়জন হারানোর বেদনা আমাদের ব্যথিত করেছে।
তিনি বলেন, অনেক সময় রোগীর চাপ এত বেশি থাকে যে সবাইকে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারি না। অনেক সময় আমরা দোকান থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া নিয়ে এবং ভাড়ার মূল্য পরিশোধ করে সেবা দিয়েছি। কিন্তু কিছু সময় থাকে যখন তাদের কাছেও সিলিন্ডার থাকে না। তখন আমরা অতিরিক্ত এই রোগীদের আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারি না। তখন আমরা ব্যথিত হই। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম জারি থাকবে ইনশাল্লাহ।