প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আগামীকাল আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠেয় এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশেষ বর্ধিত সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, জেলা ও মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক তত্ত্ব সূত্রে জানা গেছে, এই সভায় সারা দেশ থেকে প্রায় তিন হাজার নেতা ও জনপ্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন।
দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সারা দেশের দুই হাজার ৮৫৬ জন তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধির একটি তালিকা করেছেন। গত মাসে তৃণমূলের নেতাদের কাছে কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চিন্তিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কোন্দল মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীকাল রবিবার তৃণমূলের নেতাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দৈনিক দেশবানীকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দৈনিক দেশবানীকে জানান, নির্বাচনের আগে দলকে সুসংগঠিত করতে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আবারও জয় পেতে হলে দলের মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই। এ জন্য বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে তৃণমূল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক দেশবানীকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতাদের দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। জনগণের রায় যাতে পাওয়া যায়, সে জন্য কী করা প্রয়োজন, বিষয়গুলো জানানো হবে।
নির্বাচনে জয়ের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলার বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনে জয়ের জন্য সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ভণ্ডুল করতে যেসব কর্মসূচি দিচ্ছে, ষড়যন্ত্র করছে, সেখান থেকে জনগণের দৃষ্টি নির্বাচনমুখী করতে তৃণমূল নেতাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিবাদী করে তোলার আহ্বান জানাবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় কিভাবে জনগণের কাছে যেতে হবে, প্রান্তিক মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে, জনগণকে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে সে সম্পর্কে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি বারবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিষয়টি তৃণমূল নেতারা যেন গুরুত্বসহকারে নেন, সেটি আবারও মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় মনে করছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব হবে। দলের বিভেদ মেটাতে না পারলে ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দলের বিশেষ বর্ধিত সভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করবেন। কোন্দল মিটিয়ে একসঙ্গে কাজ না করলে ক্ষমতায় আসা কঠিন হবে, সেটিও বলবেন। দল ক্ষমতায় না এলে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, তাও মনে করিয়ে দেবেন। বিএনপি-জামায়াতের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দেবেন শেখ হাসিনা।
এই দিকে দলীয় সূত্র জানায়, বর্ধিত সভায় আট বিভাগের প্রতিটির একাধিক জেলা ও মহানগরের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর তিনি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক দেশবানীকে বলেন, প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এবারও তিনি নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতাদের ডেকেছেন। সেখানে নির্বাচন, দলের ঐক্য, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বিশেষ বর্ধিত সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী গণভবনে আমন্ত্রিত নেতাদের বিজয় সরণি দিয়ে জাতীয় সংসদের লেক রোড হয়ে গণভবনের ১ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। সভায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার নির্ধারিত স্থান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসংলগ্ন মাঠ। সেখানে সবার গাড়ি পার্কিং করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই নির্দেশনা মেনে চলতে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।