জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা(NSI-র ) সাবেক ডিজি টিএম জোবায়েরের সীমাহীন দুর্নীতি: দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদের প্রাথমিক সত্যতার পরও নীরব ভূমিকায় দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট বাতিল না করা নিয়ে ও আছে প্রশ্ন !!!
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সম্পদ পাচার এবং স্বজনপ্রীতির বিষয়ে গত ১১ আগস্ট ২০২৪-এ বিস্তর অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়ার ভিত্তিতে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ এবং অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেও তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বিদেশে বিপুল সম্পদ ও অর্থ পাচার
টিএম জোবায়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হ্যাম্পশায়ারে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এবং একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। লন্ডনের বেক্সলি এলাকার হেথ কর্ফট ওয়ানশান্ট সড়কের একটি বাড়ির মালিক তিনি, যার মূল্য প্রায় ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড। এছাড়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং তুরস্কেও তার বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি লন্ডনের একটি ব্যাংক এবং তুরস্কের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
দেশে জমি ও সম্পদের পাহাড়
জোবায়ের রাজধানী ঢাকার গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি, সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট, প্লট এবং বহুতল বাড়ি গড়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে রিসোর্ট, মাদারীপুরে বিলাসবহুল বাড়ি, রংপুরে ফসলি জমি, ভোলায় শ্বশুরবাড়ির এলাকায় সম্পদ রয়েছে।
তার চাচাতো ভাই জহিরের মাধ্যমে জমি কেনা ও দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৌরনদীর পালরদী নদীসংলগ্ন সরকারি খাস জমি দখল করে তিনি লঞ্চ টার্মিনাল বানিয়েছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি
জোবায়ের ডিজি থাকাকালে সংস্থার তিনবার নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম করেন। ২০২০, ২০২২, এবং ২০২৩ সালে অন্তত ৫০ জনকে প্রতি পদে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেন।
শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সালমান এফ রহমানসহ ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ পরিবারের সম্পৃক্ততা
জোবায়েরের সঙ্গে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপ সরাসরি যুক্ত। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেন তারা।
দুদকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
টিএম জোবায়েরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগসমূহ তদন্তে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল অনুসন্ধান শুরু করলে অভিযোগসমূহের প্রাথমিক সত্যতা ও আনিত অভিযোগ সম্পর্কে তার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তদন্ত দল। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও , এখনও কোনো মামলা হয়নি দুদকের পক্ষ থেকে । দুদকের ভেতরে অসাধু একটি চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট বাতিল নিয়ে বিতর্ক
ডিজিএফআই এবং এনএসআইয়ের বেশ কয়েকজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার পাসপোর্ট ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাতিল করেছে। কিন্তু, টিএম জোবায়েরের পাসপোর্ট এখনও বাতিল করা হয়নি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সে বিভিন্ন দেশে বিচরণ করছে বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়।
এতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অন্যতম দোসর সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নমনীয়তার রহস্য কি? বিশেষ সূত্রে তথ্য পাওয়া যায় যে, সুরক্ষা সেবা বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বিষয়টি সরাসরি অবগত করার পর ও কোন পদক্ষেপ এখনো নেয় নি মন্ত্রণালয় ।
জোবায়েরের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও দুদকের ধীর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। একটি নিরপেক্ষ ও নির্দিষ্ট তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচার দাবি করছে সচেতন মহল। এমন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী দোসরদের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর পদক্ষেপ আশা করছে সাধারন জনগন