বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা জড়ো হন বনানী কার্যালয়ের সামনে। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।
এদিকে অবস্থান নেয়া জাপা নেতাদের দাবি- নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে শীর্ষনেতারা ফোন ধরছেন না। তারা কোনো যোগাযোগ করছেন না তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে। তাদের দাবি, বর্তমান কমিটি এরশাদের হাতে গঠিত জাতীয় পার্টিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
১১টি আসনে জাপার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ী হওয়ার পর জাপার এমপিরা শপথ নেয়া নিয়েও শুরু করে নানান নাটকীয়তা। তবে সব কিছুর পর আজই তারা শপথও গ্রহণ করছেন।
পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এক বার্তা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আপনারা জেনেছেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোনো বিকল্প ছিলো না।
তবে সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে পারলে ভাল হতো। আপনারা দেখেছেন যে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। জাতীয় পার্টির যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তার সাথে প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে বিভক্তি করতে দেননি।
অথচ পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত ৪ বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদুরদর্শিতা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পার্টির প্রার্থীদের সাথে চরম বিশ্বাসাঘাতকতা, প্রতারণা করা এবং তাদের এক প্রকার পথে বসিয়ে দেয়ার জন্য পার্টির দুই শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। সরকারের কাছে ধর্ণা দিয়ে ২৬ টি আসনে সমঝোতা করে সেখানেও ভরাডুবি হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, জাতীয় পার্টিকে এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়া এবং নির্বাচনে ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব পদত্যাগ করে তাদের সম্মান রক্ষা করবেন।
কিন্তু সে বোধোদয়ও তাদের হয়নি। আমরা পার্টির সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের মনোভাব জানতে পেরেছি। তারা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অপসারণ দেখতে চান।
এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর তারা তাদের পদ থেকে অপসারিত বলে বিবেচিত হবেন। এই পর্যায়ে গঠনতান্ত্রিকভাবে পার্টিতে একজন ভারপ্রাপ্ত/নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়োগ করে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে।
এখন একান্ত প্রয়োজনে কিছু রদবদল ব্যতীত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদে অধিষ্ঠিত নেতৃবৃন্দ স্বপদে বহাল থাকবেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়ন দানে যে সব অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারি হয়েছে এবং ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জাতীয় পার্টির যে সব প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন- আগামীতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এই মুহূর্তে পার্টিকে সুসংগঠিত করে একটি জাতীয় সম্মেলন করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।