তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদার জন্য প্রকাশ্যে কোপানোর মতো ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে আগে থেকেই রয়েছে ছিনতাই–আতঙ্ক। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ বলছে, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ৮ থেকে ১০ দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী ‘ইমন গ্রুপ’ জড়িত বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্টের পর অপহরণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো যেসব অপরাধ এখন বেশি ঘটছে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পেশাদার অপরাধী। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও পেশাদার অপরাধীরা সক্রিয়। পেশাদার অপরাধী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকেও আলোচনা হচ্ছে। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। তাঁদের অনেকে এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ডিএমপি সূত্র বলছে, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, মতিঝিল, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে আলোচিত সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ক্যাপ্টেন ইমন, ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, আব্বাস আলী ওরফে কিলার আব্বাস ও সুব্রত বাইনদের নাম আসছে। এর মধ্যে ইমন ছাড়া অন্যদের নাম ২০০১ সালে করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় রয়েছে। তালিকায় ইমনের নাম না থাকলেও দুই দশক ধরে ঢাকার অপরাধজগতের অন্যতম আলোচিত নাম ইমন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও ইমন জামিনে বের হন। এই দুজন ছাড়া অন্তত চার শীর্ষ সন্ত্রাসী কাছাকাছি সময়ে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছেন। গত চার মাসে খুন, দখল, চাঁদাবাজিসহ অপরাধের বেশ কয়েকটি ঘটনায় পিচ্চি হেলাল ও ইমনের নাম এসেছে। গত অক্টোবরে রাজধানীর নীলক্ষেতে পাঁচ ব্যবসায়ীর দোকান দখলের চেষ্টা হয়।
এর মধ্যে দুজন বলেন, ‘ক্যাপ্টেন ইমনের’ লোক পরিচয় দেওয়া কয়েক ব্যক্তি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে তাঁদের হুমকি দেন। একপর্যায়ে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে একটি দোকান কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য করেন। পরে তাঁরা ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই শিক্ষার্থীরা পরে পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন। এরপর পুলিশ উদ্যোগী হলে ওই চাঁদাবাজেরা আর আসেননি।
সন্ত্রাসী ইমনের লোক পরিচয়ে হাজারীবাগের একাধিক ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ১০ লাখ টাকার বেশি চাঁদা দিয়েছেন তিনি। ভয়ে মামলা করতে যাননি।
হাজারীবাগকেন্দ্রিক একটি ব্যবসায়ী সমিতির একজন প্রতিনিধি প্রথম আলোকে জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের লোকেরা তুলে নিয়ে ৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়েছেন এমন পাঁচটি ঘটনা শুনেছেন তাঁরা। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছেন, তাঁদের কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কাজ চলছে। পাশাপাশি যেসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না বলে খবর বেরিয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
২ জানুয়ারি মিরপুরের রূপনগরের মিল্ক ভিটা মোড় এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এতে কারখানার এক কর্মীর পা ঝলসে যায়। মূলত চাঁদা আদায়কে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি করতে ওই ঘটনা ঘটে।