নতুন বছর শুরু হওয়ার ঠিক আগে পরিবারের শিশুদের জন্য চকলেট কিনতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন ২১ বছরের তরুণী শাথা আল শাব্বাগ। চকলেট কিনে তিনি আর বাড়িতে ফিরতে পারেননি। এর আগেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
শাথা আল-শাব্বাগ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরের জেনিনের বাসিন্দা ছিলেন। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ালেখা করা অকুতোভয় এক নারী ছিলেন শাথা। তিনি ফিলিস্তিনিদের দুঃখ গাথা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
মা, ভাতিজা-ভাতিজি ও অন্য স্বজনদের সঙ্গে জেনিনে বসবাস করতেন শাথা। মেয়েকে হত্যার সেই মুহূর্ত এখনো শাথার মায়ের চোখে ভাসে। মা উম্মে আল-মোতাসিম বলেন, ‘সে (শাথা) হাসছিল ও বলছিল, ‘‘আমরা আজ সারা রাত জেগে কাটাব।’’ এরপরই গুলি এসে তার মাথায় লাগে।
একটু সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন উম্মে আল-মোতাসিম। চোখের সামনে মেয়েকে মারা যেতে দেখার ক্ষত এখনো তাজা। বলেন, নিজের মাথা থেকে বের হওয়া রক্তের ওপর শাথা যখন পড়েছিল, তখনো তার চোখ বড় বড় করে খোলা ছিল। মনে হচ্ছিল সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।’
উম্মে আল-মোতাসিম বলেন, আমি চিৎকার করতে শুরু করি, গুলি করা বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে। আমার মেয়ে মরে গেছে।
কিন্তু শাথার মায়ের এ আর্তচিৎকার কারও কানে পৌঁছায়নি। শাথা মারা যাওয়ার পর আরও প্রায় ১০ মিনিট গোলাগুলি চলে বলে জানান উম্মে আল-মোতাসিম। বলেন, নিজের শরীর থেকে বের হওয়া ‘রক্তের পুকুরে’ পড়েছিল শাথা।
শাথার পরিবার মনে করে, এ হত্যাকাণ্ডের দায় পুরোপুরি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিরাপত্তা বাহিনীর। কারণ, শাথা যে এলাকায় নিহত হয়েছেন, সেটি পিএর নিয়ন্ত্রণাধীন।
শাথার মা বিবিসিকে বলেন, ‘পিএ ছাড়া এ দায় আর কারও না কারণ, আমাদের আশপাশের এলাকায় তাদের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। বাইরে থেকে কেউ আসতে বা যেতে পারবে না।’
যদিও পিএ ‘সন্ত্রাসীদের’ ওপর শাথা হত্যাকাণ্ডের দায় চাপিয়েছে। পিএ সাধারণত জেনিন ব্যাটালিয়নের সদস্যদের বোঝাতে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দ ব্যবহার করে। প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারাও পশ্চিম তীরে জেনিন ব্যাটালিয়নের অংশ।
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অল্প কিছু এলাকা পিএর নিয়ন্ত্রণে। তারা গত মাসে সন্ত্রাস দমনের নামে জেনিন শরণার্থীশিবিরে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছিল। চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে এবং সেই অভিযান এখনো চলমান।
জেনিন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে পিএর অভিযোগ, তারা জেনিন শরণার্থীশিবিরের কাছে একটি গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এবং সেখানে তারা অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
পিএর নিরাপত্তা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার রজবের দাবি, ‘আমরা সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি। আমাদের অভিযানের উদ্দেশ্য শিবির থেকে বিস্ফোরক যন্ত্র ও উপাদান খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলা। ওই সব বিস্ফোরক দিয়ে বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল…এই ‘‘সন্ত্রাসীরা’’ সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করে গেছে এবং বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে।’
জেনারেল রজব জেনিন শরণার্থীশিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন ও অর্থ দেওয়ার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন।
যদিও জেনিন ব্যাটালিয়ন ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে। ভিডিওতে দলের মুখপাত্র নূর আল-বিতর বলেন, পিএ তাঁদের দানব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে ও ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করছে। তাঁদের যোদ্ধারা নিজেদের অস্ত্র জমা দেবেন না বলেও জানান তিনি।