নেই নিজস্ব ভিটে মাটি। আয় রোজগারেও ভাটা। সামান্য
দিনমজুরের কাজ করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হয়না।
ভিটে মাটি কিনবে কি করে? তাই রোদ কিংবা বৃষ্টি আর ঝড়
ঝাঞ্জার সাথে সংগ্রাম করে ৩০ বছর অন্যের বাঁশ বাগানে
ঝুপড়ি ঘরে বসত করছেন সুশান্ত হালদার দম্পতি। অবশেষে তাদের
কপালে জুটেছে বাসগৃহ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের
জন্য আবাসন প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। বুধবার
বিকেলে তাদেরকে ঘরটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার
দূরে এক নিভৃত পল্লীর নাম হাড়িয়াদহ। গ্রামের বানাত ম-লের
বাঁশ বাগানে বসত করছেন সুশান্ত হালদার , তার স্ত্রী
পুর্ণিমা আর তাদের দু’সন্তান। বাঁশ আর পাটকাঠির বেড়া
দিয়ে ঘেরা একটি ঘর। তার উপরে রয়েছে পলিথিনের ছাউনি।
রোদ বৃষ্টি ঝড় সহ্য করে গাদা গাদি করে তাদের বসত।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করায় রোগ ব্যাধি তাদের নিত্য
সঙ্গি। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটানো তাদের বড় দ্বায়।
সেখানে রোগ শোকের জন্য ভাল ডাক্তার দেখানোটা স্বপ্ন মাত্র।
তাই শেষ ভরসা ওঝা বৈদ্য।
সুশান্ত হালদার জানান, পৈত্রিক কোন ভিটেমাটি না থাকায়
বিয়ের পর থেকে ওই গ্রামের জহুরুল হকের বাঁশ বাগানে
ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সংসার পাতেন তিনি। ২৫ বছর স্ত্রী
পুর্ণিমাকে নিয়েই সেখানে ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জিবনে
দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে বিজয় আর ছোট ছেলে জয় স্থানীয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সম্প্রতি সেখানে থাকা
সম্ভব না হওয়ায় গ্রামের বানাত আলীর বাঁশ বাগানে চলে
এসেছেন।
স্ত্রী পুর্ণিমা জানান, বিয়ের পর থেকেই নানা ধরণের
সংগ্রাম করে তাদের বেচে থাকা। জনপ্রতিনিধিরা ভোটের
সময় এলে নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের
পর আর তাদের দেখা মেলে না। বিভিন্ন সময়ে মেম্বর
চেয়ারম্যানদের কাছে ধরণা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। মাঝে
মাঝে অনেক লোকজন আসে তাদের দুরাবস্থা দেখে সেলফি
তোলে। আবার কেউ কেউ কিছু সহযোগিতা করে ছবি
তোলে। কিন্তু কেউ তাদের স্থায়ীভাবে বসতের ব্যবস্থা করেনি।
হালদার দম্পতিদের ব্যাপারে প্রতিবেশিরাও বেশ মর্মাহত। তারাও
অনেকের কাছে এই দম্পতির ঘরের জন্য অনরোধ করেছেন কিন্তু
জনপ্রতিনিধিরা কেউ কথা রাখেনি। এদের স্থায়ী বসবাসের
বন্দোবস্ত করার অনুরোধ জানান তারা।
রাইপুর ইউপি মেম্বর জসিম উদ্দীন জানান, বিষয়টি ইউপি
চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো
হয়েছে। তাদের ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ^াস দেন
তিনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসূমী আক্তার জানান,
বিষয়টি জানার পর তাদের বসবাসের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে
এবং জেলা প্রশাসক মহোদ্বয়কে জানানো হলে তিনি ঘর
বন্দোবস্ত দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ি ভাটপাড়া
আবাসন প্রকল্পে ওই হালদার দম্পতির থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হয়। বুধবার বিকেলে তাদেরকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।