করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছেন। তার অক্সিজেন লাগছে না। শনিবার রাতে গুলশোনে খালেদা জিয়ার বাসভন ফিরোজায় তাকে দেখে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আপাদত খালেদা জিয়াকে বাসা রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে উল্লেখ করে ডা. সিদ্দিকী বলেন, তবে যে কোনও সময় প্রয়োজন হলে হাসপাতাল নেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। গত ৩ দিন আগ থেকে ম্যাডামের একটু জ্বর আসছিলো। জ্বরের মাত্রাটা গতকাল সারাদিন এবং রাত পর্যন্ত ১০৩ দিনের মতো ছিলো।
তিনি আরও বলেন, গতকাল জ্বর থাকলেও আজকে সারাদিন ম্যাডামের শরীরের জ্বর আসেনি। আজকে সন্ধ্যা থেকে আবারও জ্বর এসেছে। যেটা ১০৪ মতো। আমরা যে নতুন এন্টিবায়েটিকটা শুরু করেছি, সেটা আজকে তৃতীয় দিন হবে। এবং এন্টিবায়েটিকের রেসপন্স ভালো বলে মনে হচ্ছে। আমরা তার পার্লস, ব্লাড পেশার এগুলো চেক করেছি, ভালো আছে।
ডা. সিদ্দিকী বলেন, মনে রাখতে হবে যে আজকে হলো তার (খালেদা জিয়ার) করোনা আক্রান্তের নবম দিন। অর্থাৎ আমরা দ্বিতীয় সপ্তাহের জটিল সময়টা পার হয়েছি। এরমধ্যে যাতে কখনও কোন রকমের জটিলতা বা বিপদ সংকেত আমরা পাই, সেই অনুযায়ী তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলহামদুল্লিাহ সবকিছু মনে হচ্ছে যে ঠিকঠাক মতোই হচ্ছে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি এই পুরো সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত যে কোনো সময় ম্যাডামের জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেই জন্য তাকে ক্লোজ মনিটর করে যাচ্ছি। সেটা চালিয়ে যাবো।
তাহলে কি খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই জানতে চাইলে ডা. সিদ্দিকী বলেন, আমরা যদি মনে করি তাকে নেয়া দরকার। তাহলে খুব দ্রুই তাকে শিফট করতে পারবো। তবে, এখন পর্যন্ত সেই রকম অবস্থা দেখা যায়নি। সবকিছুই মিলেই ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা যায়।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কি উন্নতি হচ্ছে জানতে চাইলে সিদ্দিকী বলেন, আমরা যদি দেখি গতকাল (শুক্রবার) সারাদিন জ্বর ছিলো। আজকে (শনিবার) সারাদিন জ্বর আসেনি। সন্ধ্যার পরে একটু এসেছে। তাহলে বলতে পারি উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে, শুধু মাত্র একটা ফ্যারামিটারের উন্নতি দিয়ে কিন্তু সার্বিক উন্নতিকে মূল্যায়ন করা যাবে না। জ্বর কমে গেছে, তিনি ভালো হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে ঢিলেডালা ভাব দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। প্রপেশনালি আমাদের যে মেডিক্যাল বিষয় আছে, সেটা দিয়ে আমরা তার চিকিৎসা করে যাচ্ছি।
সিটি স্ক্যান রিপোর্টের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সিদ্দিকী বলেন, রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। সেখানে নূন্যতম সংক্রমন এসেছে। এটা খুবই কম।
তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে অনেক কোভিড রোগী দেখিছি। আমরা দেখেছি রোগী কিছু বোঝে উঠে ওটার আগেই ৫০-৬০ শতাংশ সংক্রমন হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাডামের ক্ষেত্রে সেটা নেই।
ডা. সিদ্দিকী বলেন, গত বছর মার্চে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তার ডাক্তারা কি বলেছিলেন? তখন তার ক্ষুধা মন্দা ছিলো, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ছিলো। তার ব্লাড সুগার সেটা ১১ ওপরে ছিলো। সেটোকে এখন আমরা ৮ এর কাছে নিয়ে এসেছি। আর্থ্রাটিকসের ব্যাথাও কমে গিয়েছিলো। সেই কারণে তিনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে মোটামুটি একটা ভালো অবস্থানে দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিজ্ঞাতা বলে, করোনা রোগী একবার ভালো হয়ে, এমনকি হাসপাতাল থেকে তিনি বাসায় পর্যন্ত চলে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যায়। এরপর আবারও অসুস্থ হয়ে যায়। কাজেই আমাদের সবগুলো অভিজ্ঞাতা রেখেই তার চিকিৎসা করতে হবে। যাতে কোথাও কোনও গ্যাপ তৈরি না হয়।
এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কোনও অক্সিজেন দেয়া লাগে নাই বলে উল্লেখ করে ডা. সিদ্দিকী বলেন, মানসিকভাবে তিনি খুবই শক্তিশালী আছেন।