সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে চাল ও গম আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন, যা গত চার দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আমদানীকৃত খাদ্যশস্যের এক-চতুর্থাংশ চাল, বাকিটা গম। এই আমদানি ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল প্রায় ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।
দেশে সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা প্রতিকূল পরিস্থিতির বছর ও এর পরের বছর বাড়তি পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়। এই বাড়তি আমদানিতে প্রধান খাদ্যশস্য চালের অংশই থাকে সবচেয়ে বেশি। গত বছর আমন মৌসুমে চার দফা বন্যায় দেশে ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এতে আমনের উত্পাদন কমেছিল। বাজারে চালের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে খাদ্য নিরাপত্তা। যদিও পরে বোরো মৌসুমে ব্যাপক উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পরও সরকারি খাদ্য গুদামে মজুদ কমে আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। চালের দামও কমেনি খুব একটা। এতে গত অর্থবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তি পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি হয়। এই আমদানির তালিকায় চালের পরিমাণ রয়েছে উল্লেখযোগ্য।
এর আগে দেশে চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ওই বছর দেশে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার টনে। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ আবার কিছুটা বেড়ে ৬৪ লাখ টন দাঁড়ায়। তবে ওই বছর চাল আমদানি হয়েছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম, যার পরিমাণ মাত্র চার হাজার ১৮০ টন। এই চালের পুরোটাই আমদানি করা হয়েছে বেসরকারিভাবে।
ওই সময় সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করার প্রয়োজন পড়েনি দেশে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একেবারে উল্টো চিত্র দেখা দিল। গত অর্থবছর (২০২০-২১) দেশে যে মোট ৬৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৫০ টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে তার ২৬ শতাংশই চাল। এ সময় চাল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টন। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার টন আমদানি করেছে সরকার। বাকি সাত লাখ ৮৫ হাজার টন এসেছে বেসরকারিভাবে।
গত কয়েক বছর বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে নিরুত্সাহিত করছে সরকার। পাশাপাশি সরকারিভাবেও চাল আমদানি একেবারেই বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছিল। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও আমদানি ছিল অন্যবারের তুলনায় বেশ কম, ৭০ হাজার ৩৫০ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারিভাবে চাল আমদানি না করার পাশাপাশি উত্পাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও দৃঢ় অবস্থানে ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। উত্পাদন বাড়ায় বৈশ্বিক চাল উত্পাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ থেকে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এ ছাড়া কৃষকদের দামের নিশ্চয়তা দিতে বেসরকারি খাতকে আমদানিতে নিরুত্সাহিত করার তাগিদেও উচ্চহারে শুল্কারোপ করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি ও আমন মৌসুমে চার দফা বন্যা এই হিসাব কিছুটা ওলটপালট করে দিয়েছে।
অন্যদিকে গম উত্পাদনে এখনো খুব একটা উন্নতি করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিবছরই চাহিদা বাড়লেও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না পণ্যটির উত্পাদন। আবহাওয়াজনিত কারণে কয়েক বছর ধরে উত্পাদন ১২-১৩ লাখ টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যদিও আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে, তার পরও আমদানীকৃত খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই রয়েছে গমের দখলে। সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছে ৫২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টন। আগের বছর আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টন।
গত বছর সরকারিভাবে গমের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। আগের বছর তিন লাখ ৬৭ হাজার টন আমদানি হলেও গত বছর হয়েছে চার লাখ ৭৮ হাজার টন। তবে বেসরকারিভাবে গম আমদানি কমেছে। গত বছর বেসরকারিভাবে গম আমদানি হয়েছে ৪৮ লাখ ২১ হাজার টন, যা আগের বছর ছিল ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার টন।