1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

‘কোভিশিল্ড’ নয়, ফাইজারের টিকা নেবেন খালেদা জিয়া?

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সরকারের দুই দফায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে প্রায় ১০ মাস ধরে গুলশানের ভাড়া বাড়ি ‘ফিরোজা’য় নিঃসঙ্গ দিন কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। এ সময়ে এক দিনের জন্যও তিনি ফিরোজা থেকে বাইরে বের হননি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতির দিকে। করোনাভাইরাসের প্রকোপসহ নানা কারণে নেতা-কর্মীদের দেখা-সাক্ষাৎ মানা। শুধু তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের লোকজনই নিয়মিত ফিরোজায় আসা-যাওয়া করছেন। নীরবে-নিভৃতে সময় কাটছে বেগম জিয়ার।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ নানা কারণে এখনো করোনাভাইরাসের টিকা নেননি খালেদা জিয়া। তবে তিনি টিকা নিতে চান বলে জানা গেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি শারীরিকভাবে সুস্থবোধ করলে পরে সুবিধাজনক সময়ে তিনি টিকা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ না নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে ফাইজারের টিকা নিতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তবে দলীয় ও পারিবারিক সূত্র বলছে, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’। তাছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক যে জটিলতা রয়েছে, সে বিবেচনায় তিনি টিকা নেয়ার জন্য উপযোগী কি-না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সত্তরোর্ধ্ব খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চোখ ও দাঁতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। তিনি নিয়মিত একাধিক ওষুধও সেবন করেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দায়িত্বশীলদের একটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে ইতিবাচক অবস্থানে আছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা একাধিক দায়িত্বশীল জানান, বিএনপি-প্রধান ভ্যাকসিন নেবেন। কিন্তু কবে নেবেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

সূত্রের দাবি, তৃতীয় দফায় শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। পরিবার ও দলের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে দেশের বাইরে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে। ফলে, সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশযাত্রার অনুমতি দেওয়া হলে ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন খালেদা জিয়া। আর বিদেশযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনও বাধা হবে না বলেও জানান একাধিক দায়িত্বশীল।

খালেদা জিয়ার টিকা নেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের টিকা নেয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তিনি ফুলটাইম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলছেন। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন। তার ভ্যাকসিনের নেওয়ার ব্যাপারে কোনও নেগিটিভিটি নেই। উনি পজিটিভ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডামের টিকা গ্রহণের বিষয় নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা তার পরিবার ও চিকিৎসকরা দেখভাল করবেন। টিকা তো নিতে হবে সবাইকে। আমরা টিকা নিয়ে ডিপ্লোম্যাসি করছি না, টিকা নিয়ে রাজনীতি করছি না। টিকা যেহেতু দেয়া হচ্ছে, আমরা সবাই নেব।’

দলীয় ও পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা জেলবন্দী সময়ের চেয়ে এখন অনেক উন্নতির দিকে। তাঁর খাওয়াতেও এখন কিছুটা রুচি বেড়েছে। তবে তাঁর আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্যসব রোগ এখনো বিদ্যমান। ডায়াবেটিসও ওঠানামা করে। নিয়মিতই তিনি ডায়াবেটিসসহ উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করছেন। এখনো তাঁর চলাফেরায় কারও সাহায্য নিতে হয়। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথাও আছে। বাসায় দুজন নার্স স্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন। বাম চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে তাঁর।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য জানান, প্রতিদিনই একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও যান মাঝেমধ্যে। ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তিনি। এখন নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ থেকে ১৪-এর মধ্যে ওঠানামা করে। লন্ডন থেকে পুত্রবধূ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান বেগম জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন।

জানা যায়, ফিরোজায় নিঃসঙ্গ খালেদা জিয়ার এখন অবসরের সঙ্গী পত্র-পত্রিকা আর বই পড়া। দীর্ঘ সময় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়েন। মূলধারার সব পত্রিকাই তাঁর বাসভবনে বান্ডিল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেসরকারি টেলিভিশনের খবরাখবরও দেখে সময় কাটান তিনি। এ ছাড়া লন্ডনে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমান, তার দুই পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা বলেও সময় কাটে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে বড় ভাই মরহুম সাইদ এস্কান্দারের পরিবার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের পরিবার, সেজো বোন সেলিনা ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও বাসায় কথাবার্তা বলে সময় কাটে বেগম জিয়ার।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সেজো বোন সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে খালেদা জিয়ার এখন উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। বাসায় থেকেই যতটুটু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শরীরের গিরায় গিরায় এখনো ব্যথা কমেনি। নিজে একা দাঁড়াতেও পারছেন না, হাঁটাচলাও করতে পারছেন না। কাউকে ধরে নিয়ে যেতে হয়। বিছানা থেকে বাথরুমে যেতেও কারও সাপোর্ট প্রয়োজন। খাবারে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক খাবারই খাচ্ছেন। যখন যেটা তাঁর পছন্দ সেটাই রান্না করে দেওয়া হয়।’

সাময়িক মুক্তি পেলেও আইনগতভাবে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। তাই দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পরিচালনা করছেন। বেগম জিয়ার ওপর থেকে আইনি জটিলতা কেটে গেলে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। দেশবাসী সেই আশা নিয়েই তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, নানা বিধিনিষেধের কারণে বেগম জিয়া রাজনৈতিক কোনো কথাবার্তা বলছেন না। তারেক রহমানকেই দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে তারেক রহমান দল পরিচালনা করছেন। এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে বলে জানা যায়। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য সরকার ও পরিবারের আলোচনার মাধ্যমে বেগম জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। কূটনৈতিক মহলও এ নিয়ে উদ্যোগী হয়। সরকার অনুমতি দিলে ব্রিটিশ হাইকমিশন বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য ভিসা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় সেই উদ্যোগ থেমে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে নতুনভাবে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তাঁর সাজার রায় হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। গতকাল একটি মামলায় নড়াইলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। ২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর বিদায়ী বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরও এক দফায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। জামিনে মুক্তির পর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব