কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার অর্ধমাস পেরোতে না পেরোতেই এবার একই জেলায় ভাঙচুর করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার রাতের আধারে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে স্থাপিত বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়।
দুর্বৃত্তরা ভাস্কর্যটির কানে ও চোয়ালের অংশ-বিশেষে ক্ষতিসাধন করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে তদন্ত কাজ শুরু করেছে পুলিশ।
কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তদন্তে মাঠে নেমেছে। যারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক কেন, তাদের কোন রেহাই নেই।
কয়া কলেজের অধ্যক্ষ হারুন-অর- রশিদ জানান, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ন্যক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভাস্কর্য ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় জন্ম নেয়া যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি ঝিনাইদহ জেলার অধিবাসী ছিলেন। কোন অস্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি হাতে বাঘ হত্যা করার পর ‘বাঘা যতীন’ নামেই সকলের কাছে পরিচিত পান তিনি। তিনি ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন ‘যুগান্তর দলে’র প্রধান নেতা।
ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বাঘা যতীন ৩৬ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের ওডিশার বালাশোরের কপ্তিপোদায় ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন।
ব্রিটিশ ভারতে বাঙালিসহ ভারতবর্ষের সব জাতিসত্তার স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল এক সূত্রে গাঁথা। প্রধান লক্ষ্য ছিল ইংরেজদের বিতাড়িত করা। আর ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে যারা স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন, যাদের আত্মদান ইংরেজ শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে, তাদের অন্যতম বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। দেশমাতৃকার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা, অপরিসীম সাহস ও শৌর্যবীর্য তাকে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের প্রথম সারিতে স্থান দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেদিন ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিনই ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন মামলা করেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪২৭/৩৪ ধারার মামলায় আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানি শেষে মাদ্রাসার দুই ছাত্রের পাঁচ দিন এবং দুই শিক্ষকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে গ্রেপ্তার চারজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।