কুমিল্লায় মাদক ও চোরাকারবারিদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার কারণে বেশ আগে থেকেই কিলিং টার্গেটে ছিলেন কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল।
সোমবার বিকালে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে উপর্যুপরি গুলি করে তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার বুক, পেট ও মাথায় ৯টি গুলিবিদ্ধ হয়। খুব কাছে থেকেই তাকে গুলি করে মুখোশধারীরা।
রাতে ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ মিয়া জানান, কাউন্সিলর সোহেল আগে থেকেই কিলিং টার্গেটে ছিলেন, তাকে হত্যার জন্য আগে থেকেই হুমকি-ধমকি আসত, কিন্তু তিনি তা আমলে নিতেন না। খুব সাহসী ছিলেন কাউন্সিলর।
তিনি আরও জানান, মাদক সিন্ডিকেটের হোতা শাহ আলমের মাদক ও চোরাকারবারসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদানের জেরেই কাউন্সিলর সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আজীবন তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
রাজনীতির শুরু থেকেই এ কাউন্সিলর ছিলেন মাদক ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। এরই মধ্যে শীর্ষ মাদক ও চোরাকারবারি শাহ আলম গংদের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই সিন্ডিকেটের অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার কারণেই জীবন দিতে হলো প্রতিবাদী এ কাউন্সিলরকে।
এদিকে কাউন্সিলর সোহেলের মৃত্যুর খবর শুনে ওই ওয়ার্ডের শত শত নেতাকর্মী এবং সাধারণ লোকজন রাতে রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক র্যা ব, পুলিশ ও ডিবি মোতায়েন করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদসহ র্যা ব এবং পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডটি ভারত সীমান্তের অদূরে হওয়ায় এ ওয়ার্ডের আশপাশে মাদক ও চোরাকারবারিদের বেশ কিছু সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মো. সোহেল ছিলেন মাদক ও চোরাকারবারবিরোধী। মাদকের বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ এবং এ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করতেন এ কাউন্সিলর।
ওয়াজ, মাহফিল, সভা, সমাবেশ এবং মসজিদের জামাতের আগেও মাদক ও অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। যার ফলে মাদক কারবারি এবং সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। এরই মধ্যেই শীর্ষ মাদক সিন্ডিকেটের হোতা শাহ আলমের মাদক কারবার এবং নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের বাধা হয়ে দাঁড়ান কাউন্সিলর সোহেল। এতে ওই সিন্ডিকেট তাকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। সন্ত্রাসী শাহ আলমের নেতৃত্বে সোমবার বিকালে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে উপর্যুপরি গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। তার বুক, পেট ও মাথায় ৯টি গুলিবিদ্ধ হয়। তবে কিলিং মিশনের বাকি সদস্যদের চিনতে না পারলেও মাস্টার মাইন্ড শাহ আলমকে চিনতে পারেন সবাই।
এ সময় গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হরিপদ সাহাও নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম বলেন, নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমরা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।