বার বার সতর্ক করার পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার আর জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ধীর এবং অদক্ষ সাড়াদানে করোনাভাইরাস সঙ্কট কীভাবে একটি বৈশ্বিক ব্যর্থতার নজির হয়ে উঠেছে, সেই চিত্র এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্যানেলের তৈরি করা এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দেখিয়েছে, ধারণার ভুল, পরিকল্পনার ত্রুটি এবং পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব- এমনকি খোদ ডব্লিউএইচওর ভুল পদক্ষেপ কীভাবে মহামারীর বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ।
মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতি ও সাড়াদান বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত এই স্বাধীন প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “সামগ্রিকভাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, মানুষের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করতে পারিনি।”
অনেক দেশে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী না পাওয়া এবং বড় পরিসরে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে না পারার মত ব্যর্থতাগুলো বছরজুড়ে চলা করোনাভাইরাসের মহামারীর শুরুর দিকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
ডব্লিউএইচও প্যানেলের প্রতিবেদন বলছে, এই সঙ্কট উত্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার, মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল, বার বার তার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
নিউ জিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ও লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফের নেতৃত্বে গঠিত এই প্যানেল এখনও তাদের কাজ শেষ করেনি। তবে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনের খসড়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, নতুন কোনো রোগের প্রাদুর্ভাবে সাড়া দেওয়ার কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে হবে।
মহামারীর সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে শ্লথ গতি ও অস্পষ্টতা, প্রস্তুতির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা পরিকল্পনা সময়মত বাস্তবায়ন করতে না পারা, সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেশের সরকারে সমন্বয়ের অভাব এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি- এরকম এক একটি ব্যর্থতা কী করে আরেকটি ব্যর্থতা ডেকে এনেছে, সেই বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই খসড়ায়।
প্যানেল বলছে, জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের শেষে চীন থেকে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করার জন্য কেন ২০২০ এর ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল, তা বোধগম্য নয়।
কোনো একটি ভাইরাস যে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছিল বহু বছর ধরেই। সেরকম জরুরি পরিস্থিতির জন্য ডব্লিউএইচওকে প্রস্তুত করতে নানা রকম কমিটি, টাস্কফোর্স আর উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল কাজ করলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। ফলে যখন কোভিড-১৯ এল, তখন পুরো বিশ্ব সেই বিপদের সামনে উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল বলে মনে করছে প্যানেল।
আবার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করলেন, বহু দেশ তা সময়মত আমলে না নেওয়ায় পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়েছে, সে কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বের সাড়াদান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এই স্বাধীন প্যানেল গঠন করেন।
প্যানেল বলেছে, এই খসড়া প্রতিবেদন তারা তৈরি করেছে শত শত নথিপত্র পর্যালোচনা করে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে। সামনের সারিতে থাকা শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও সেজন্য নেওয়া হয়েছে।