করোনাকালে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। বুধবার বাংলাদেশসহ অনেক দেশে মুসলিমদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে চলমান অতিমারির মতো এক বিরুদ্ধ পরিবেশে। সংগত কারণেই এবারও ঈদে আনন্দের স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসটা কম।
লোভ, হিংসা ত্যাগ করে, নিজের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি করার ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করাই এই ঈদের মূল তাৎপর্য। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যেমন করে মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন, সেই ত্যাগকে স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি করবে।
ঈদের দিন মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করে থাকেন। মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করে নিজের, পরিবারের, দেশ-জাতির কল্যাণের পাশাপাশি, করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন।
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাতেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
করোনা মহামারির মধ্যে এবার নিয়ে চতুর্থ ঈদ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। তা ছাড়া এই সময়ে দেশে করোনা সংক্রমণও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঈদের চিরাচরিত উৎসব উদযাপন হবে না।
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আগে থেকেই ঈদুল আজহার দিনটি নির্ধারিত থাকে। ঈদুল আজহা আমাদের দেশে সাধারণত ‘কোরবানির ঈদ’ নামেই পরিচিত। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মহান আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এই ঈদ উদ্যাপিত হবে। তবে ঈদের পরের দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে এবারও গতবারের মতো সীমিতসংখ্যক হজযাত্রী নিয়ে পবিত্র হজ সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করে এবং কোরবানির বর্জ্য যথাস্থানে ফেলে পরিবেশদূষণ বন্ধে সবাই সচেষ্ট থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
করোনার কারণে অবশ্য গত বছর থেকে কোনো ঈদেই ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদেই ঈদের জামাত আদায় করতে হবে বলে সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু কেনা নিয়েই ঘরে ঘরে চলতে থাকে আলাপ-আলোচনা আর প্রস্তুতির পালা। নিজের পালন করা সবচেয়ে ভালো পশুটি কোরবানি করাই উত্তম। তবে বাস্তবতার কারণে এখন সবার পক্ষে পশু পালন করা সম্ভব হয় না।
সে কারণে পশু কিনতে হয়। কোরবানিদাতারা সাধারণত দু-এক দিন আগে থেকে পশু কিনে বাড়িতে এনে লালন-পালন, যত্ন-আত্তি করে থাকেন। তবে নগরের মানুষ ঈদের আগের দিন পশু কেনেন। এবারের ঈদেও এর ব্যক্তিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছে পশু কেনাবেচা। আজও অনেকেই পশু কিনবেন। বাড়ির ছোটরা আনন্দে মেতে ওঠে পশুর পরিচর্যায়। শহরে গবাদিপশুর বিপুল সমাবেশ, তাদের হাঁকডাক, খড়বিচালি, কাঁঠালপাতা, কাঁচা ঘাস নিয়ে মানুষজনের ছোটাছুটি—এসবের মধ্য দিয়ে কোরবানির সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নাগরিক পরিবেশে বেশ অন্য রকম আবহ সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ঈদ উদ্যাপন করতে চিরাচরিত পন্থায় বাস, ট্রেন, লঞ্চে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। শহরের পরিবেশ বেশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে।
ঢাকায় কোরবানির হাটে পশু উঠেছে পর্যাপ্ত, তবে সেখানেও ছিল করোনার সতর্কতা। এবার ঢাকা উত্তর সিটিতে গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ মোট ৯টি এবং দক্ষিণে ১১টি—মোট ২০টি পশুর হাট বসেছে রাজধানীতে। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে অনেকেই অনলাইনে পশু কিনেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা চলছিল। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর থেকে অনলাইনে পশু কেনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। এ বছর অনলাইন হাট থেকে প্রায় ৪ লাখ পশু কেনাবেচা হয়েছে।
আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজধানীতে এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত হবে না। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে ঈদের পাঁচটি জামাত। সকাল সাতটায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া পাড়ামহল্লায় মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।