দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত দুটি রেশম কারখানার মধ্যে রাজশাহী রেশম কারখানা সম্প্রতি চালু হলেও ২০ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একের পর এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
কবে এটি চালু হবে? নাকি এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে? প্রশ্নটি এখন ঠাকুরগাঁওবাসীর। ঠাকুরগাঁওয়ের এ রেশম কারখানাটি চালু হলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
এর আগেও বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি মালিকানাধীন ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা পুনরায় চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল কারখানাটি পরিদর্শন করেছিলেন।
সেসময় পরিদর্শকরা বলেছিলেন, এই রেশম কারখানাটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় কারখানাটি চালু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও দৃষ্টি পড়েনি কারখানাটির ওপর। আশা যেন আশাই রয়ে গেল। কবে চালু হবে? এমনই ভাবছে জেলার সাধারণ মানুষ ও রেশমচাষিরা।
রেশম বোর্ডের তথ্যমতে, ক্রমাগত লোকসানের অজুহাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রেশম কারখানাটি ২০০১ সালে বন্ধ ঘোষণা করার পর আর চালু করা হয়নি। এতে কারখানাটির ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার রেশমচাষি বেকার হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করলেও কারখানাটি চালুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
ওই সময় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটি আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি পুনরায় স্থাপন ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার পরও কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।
১৯৭৭-৭৮ সালে আরডিআরএস বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ঠাকুরগাঁও শহরের পাশে দুরামারি নামক জায়গায় (বর্তমানে বিসিক শিল্পনগরী) এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। পরবর্তীতে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালে কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর কারখানাটি গত ২৬ বছরে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে পর্যায়ক্রমে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান করে। এ লোকসানের অজুহাতে ২০০১ সালে কারখনাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এতে কর্মরত ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় রেশমচাষি স্থায়ীভাবে বেকার হয়ে পড়েন।
সাদকেুল ইসলাম নামে এক চাষি জানান, অন্য ফসল ফলিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। কারখানাটি চালু হলে তারা আবারও একটু স্বচ্ছলতার মুখ দেখবেন।
মিরাজুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, কারখানাটি বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে রয়েছে। জানি না কবে আবারও আগের মতো একটু শান্তিতে জীবনযাপন করব। চালু হলে আমার মতো অনেক গরিবের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তাছাড়া এ কারখানার উৎপাদিত রেশমি বস্ত্র উন্নতমানের হওয়ায় দেশে ও বিদেশে অনেক চাহিদা রয়েছে। এর কাঁচামাল তুত গাছ উৎপাদন ও এর পরিচর্যা খরচ অনেক কম। ফলে কাঁচামালের কোনো অভাব হবে না বলে মন্তব্য করেন এই চাষি।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শামীম হোসেন বলেন, শ্রমিক ও চাষিদের কথা ভেবে অবিলম্বে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি পুনরায় চালু করা দরকার। কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত হাজারো রেশম চাষি পুনরায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পরও অনেক চাষি গুটি উৎপাদন করছেন শুনেছি। কাজেই কারখানাটি পুনরায় চালু করা উচিত। কারখানাটি চালুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে জেলার সকল মহল মতামত দিয়েছেন। আশাকরি খুব দ্রুত রেশম কারখানাটি চালুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।