একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী সামরিক বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশের সুরক্ষাই নয়, অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রভাব বিস্তারেও সামরিক শক্তি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। আর এজন্যই বিশ্বের প্রতিটি দেশ তার সামরিক শক্তিকে প্রতিনিয়ত বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। অনেক দেশ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে শুধু এই খাতে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালেও বিশ্বের শীর্ষ ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তি র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে এবার ‘এশিয়ান মিলিটারি স্ট্রেন্থ, ২০২৫’ শীর্ষক আলাদা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। সেখানে জায়গা পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশের ৪৫টি রাষ্ট্র। মোট ৬০টি আলাদা আলাদা বিষয়কে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ের সেরা সূচক স্থির করা হয়েছে শূন্যকে। অর্থাৎ, যে দেশ শূন্যের যত কাছে নম্বর পাবে, তাদের সামরিক শক্তি তত বেশি।
সৈন্যশক্তির দিক থেকে র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। এ ছাড়া কোন দেশের কাছে কী কী অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, তালিকা তৈরির সময়ে সেটিও খতিয়ে দেখেছেন সমীক্ষকেরা। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে রিপোর্টে।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে রাশিয়া। তবে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবার উপরে। তালিকা অনুযায়ী, এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার পরেই রয়েছে চীনের অবস্থান। এছাড়া শুরুর দিকে আরও রয়েছে ভারত, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ। পরমানু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান বেশ কিছুটা নিচে। আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৭তম অবস্থানে।
সূচকে রাশিয়া পেয়েছে ০.০৭৮৮ নম্বর। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার হাতে। এই সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজারের আশপাশে। আর সৈন্য সংখ্যার নিরিখে রাশিয়ার রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সামরিক বাহিনী।
এশিয়ান র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের সূচক নম্বরও রাশিয়ার সমান। অর্থাৎ চীনও পেয়েছে ০.০৭৮৮ নম্বর। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ জানিয়েছে, ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’র (পিএলএ) রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী। বর্তমানে রেড ড্রাগনের দেশের মোট সৈন্য সংখ্যা ৩১ লাখ ৭০ হাজার। এমনকি, রণতরীর সংখ্যায়ও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে চীন। বিশ্বের বৃহত্তম নৌবহর এখন শি জিনপিংয়ের দেশের।
তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’- সূচকে ভারতের পয়েন্ট ০.১১৮৪। দেশটির মোট সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এই দেশে। ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি। ফলে এই দেশের রিজার্ভ সেনা সংখ্যার আকারও অনেক বড়। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ভারত রয়েছে চতুর্থ স্থানে।
এশিয়ার তালিকায় চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং তুরস্ক। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই ৩টি দেশই পরমাণু শক্তিধর নয়। গত কয়েক বছর ধরেই সামরিক ব্যয় বরাদ্দ অনেকটা বাড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান। অন্যদিকে ড্রোনশক্তির কারনে বিশ্বে আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে তুরস্ক।
এশিয়ায় সামরিক শক্তির তালিকায় পাকিস্তান রয়েছে সপ্তম স্থানে। পরমাণু শক্তিধর দেশটি সৈন্য সংখ্যা এবং অস্ত্র সমৃদ্ধির দিক থেকে উপরের দিকে থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা সংকটের মধ্যে রয়েছে। ফলে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ র্যাঙ্কিংয়ে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একটা সময়ে বিশ্ব তালিকায় সাত বা আট নম্বরে থাকা ইসলামাবাদ এখন বিশ্ব তালিকায় ১২ নম্বর অবস্থানে।
এশিয়ায় অষ্টম স্থান পেয়েছে ইন্দোনেশিয়া। ৯ম ও ১০ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইসরায়েল এবং ইরান। ১১তম স্থানে রয়েছে তাইওয়ান। পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়া রয়েছে ১৬তম স্থানে। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান।
এশিয়ার দেশগুলোর সামরিক শক্তির তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১৭তম। বাংলাদেশের মোট সামরিক বাহিনীর আকার প্রয় ৭ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭,৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫,১০০ নৌসেনা।