দিনাজপুর শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে বোচাগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে খাবারের হোটেল খুঁজতে খুঁজতে রানীর ঘাট মোড়ে গেলে হতচকিত হবেন পর্যটকরা।
দেখবেন পাশাপাশি চারটি ভাতের হোটেল। প্রতিটি হোটেলের নাম-ই ‘ভাবি’। চার হোটেলে ক্রমিক নং দেওয়া। ভাবির হোটেল-১, ভাবির হোটেল-২, ভাবির হোটেল-৩ এবং ভাবির হোটেল-৪। অর্থাৎ চার ভাবির রাজ্যে আগমন ঘটেছে পর্যটকের।
ভাবির রাজ্য বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। কারণ রানীর ঘাট মোড়কে এখন লোকে ‘ভাবির মোড়’ বলেই চেনে বেশি।
হোটেলগুলোর এমন সব নাম হওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকার চার ব্যক্তির চার স্ত্রী। যাদেরকে ভাবি বলে সম্বোধন করেন এলাকাবাসী। সেখান থেকেই হোটেলের নাম ‘ভাবির হোটেল’। কোন ভাবির কোন হোটেল সেটা চিহ্নিত করতেই তারা ১,২ করে ক্রমিক নং যোগ করেছেন তারা।
হয়তো বয়সের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই ক্রমিক নং সাজানো হয়েছে। ভাবিদের পরিচয়ের বিষয়ে জানা গেছে, জামালউদ্দিনের স্ত্রী মাসতারা বেগম (৪৫), দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪০), নাজমুল হকের স্ত্রী মেরিনা পারভীন (৩৭) এবং হুসেন আলীর স্ত্রী বেলী আক্তার (৪০)।
চার ভাবির হোটেলই বেশ জনপ্রিয়। এখানে ভাবিদের হাতের রান্না হাঁসের মাংস ভোজন রসিকদের কাছে অনন্য। দামেও অনেক কম।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের লোভ।
হোটেলগুলো থেকে দেখা যায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে চলা টাঙ্গন নদ। নদের ওপরে নির্মিত সেতুসহ রাবার ড্যাম।
কল্পনা করা যায়! ভাবির হোটেলে বসে পা দুলিয়ে মুখরোচক হাসের মাংস ভক্ষণের সঙ্গেসঙ্গে টাঙ্গন নদের ওপরে রাবার ড্যামের সৌন্দর্য উপভোগ করাও যাচ্ছে।
জানা গেছে, খাবার পরিবেশন থেকে বিল নেওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ হোটেলের সব কাজই করেন এই ‘চার ভাবি’।
কেমন চলছে, ভাবিদের এই চার হোটেল?
তা শোনা গেল প্রথম হোটেল চালু করা ভাবি মাসতারা বেগমের কণ্ঠে। মাসতারা বলেন, ‘এখানে টাঙন নদী থেকে বালু তুলতে অনেক শ্রমিকের আনাগোনা ছিল। তখন খুব ভিড় হতো। পরে ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায় কিছুদিন মন্দা গেছে। এরপরে রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু হলে আবার বেচাবিক্রি শুরু হয়। আর এখন এই হোটেলগুলোর পরিচিতি দিন দিন বাড়ছে। পত্রিকায় খবর হচ্ছে। দূরদূরান্তের লোক আসছেন। বেচাবিক্রিও বেড়েছে অনেক। শুধু ভাবির হোটেলে খেতেই দিনাজপুর শহর থেকে লোক আসেন এখানে।’