ফার্মের মুরগি বরাবরই ছিল প্রাণিজ আমিষের সাশ্রয়ী উৎস। নিম্ন আয়ের মানুষ ঘরে মাছ-মাংস না থাকলে এলাকার দোকান থেকে এক-দেড় কেজি ব্রয়লার মুরগি এনে দিন চালিয়ে দিত। সেই ব্রয়লারের দামও এখন নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। দেশি ও সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে নিম্ন তো বটেই, অনেক মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। মুরগির বাজার চড়া সপ্তাহ তিনেক ধরেই। চলতি সপ্তাহে তা আরো তেতে উঠেছে। বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, একসময় বাজারে মুরগির দাম কম এবং খাদ্যের দাম বেশি থাকায় দীর্ঘদিন লোকসান দেওয়ার পর অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে করোনার প্রকোপ কমে আসায় সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে। লোকের বাইরে খাওয়াও বেড়ে অনেকটা আগের মতো পর্যায়ে। এতে মুরগির চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম বেশি।
ক্রেতার জন্য অবশ্য আরো বেশি খারাপ খবর সবজির বাজারে। খরচ সবচেয়ে বেড়েছে সবজিতেই। ছোট একটি পরিবারেও দৈনিক আলু, বেগুন, টমেটো ইত্যাদি মিলিয়ে পরিমাণে অন্তত এক কেজি সবজি লাগে। তাই সবজিতে যদি কেজিপ্রতি ১০ টাকাও বাড়ে, তাহলে ক্রেতার দৈনিক সমপরিমাণ খরচ বাড়তি লাগে। সংসারের নিত্যদিনের শত প্রয়োজন মেটাতে দামের এ রকম ছোট ছোট বৃদ্ধিই এক হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৬০ টাকা কেজির ওপরে। এর মধ্যে নিত্যদিন বেশি ব্যবহৃত সাধারণ কয়েকটি সবজির দাম ১০০ টাকার বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায়ই দাম বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে তা ১৭৫ টাকা পর্যন্ত দামে কেনা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে। আর মাস দুয়েক আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন দাম স্থির ছিল ১১৫ টাকার মধ্যে। গতকাল খামার পর্যায়ে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৪৭ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে আরো বেশি। গতকাল খুচরা বাজারগুলোতে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। অথচ মাসখানেক আগেই বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা করে। এর আগের মাসে ছিল বেশি হলে ২৫০ টাকা। সোনালির দামও দীর্ঘদিন আটকে ছিল ২২০ টাকা কেজির মধ্যে। গতকাল খামার পর্যায়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৬৫ টাকা কেজি দরে। একটাই স্বস্তির বিষয় হলো, মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতোই ১০৮ থেকে ১১০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।
দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে, এটা ঠিক। তবে সম্প্রতি মুরগির দাম বেড়েছে হঠাৎ একসঙ্গে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই। করোনার কারণে এত দিন আটকে থাকা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো জোরেশোরে শুরু হয়েছে আবার। এ ছাড়া মেস, হোস্টেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলেছে। এসব খাতে মুরগির বড় ভোগ হয়।’ তবে বাড়তি দাম বেশিদিন থাকবে না বলে আশ্বস্ত করলেন খন্দকার মোহসিন। তিনি বলেন, বন্ধ থাকা খামারগুলো এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করায় দাম কমে যাবে।
বাজারে অনেক সবজির দেখা মিললেও দামে তার তেমন প্রতিফলন নেই। আগাম ফলন হওয়া শীতের অনেক সবজি বাজারে উঠেছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজির ওপরে। এর মধ্যে পাঁচটির বেশি সবজির দাম দেখা গেছে শত টাকার ওপরে। কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ থেকে এলাকাভেদে প্রায় ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং শিম ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। এ ছাড়া গোল বেগুনের দাম বেড়ে এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। ২৫০ গ্রাম ওজনের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। কেজি হিসাবে দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকার বেশি। ধনেপাতা ১০০ গ্রাম কিনতেই লাগছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ তা-ও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
এর বাইরে বরবটি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, করলা, মুলা, কাঁকরোল, শসা, ঢেঁড়স, পটোল, লম্বা বেগুনসহ বেশ কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। আলু, পেঁপে, কচুর মুখিসহ গুটিকয়েক সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে আছে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম। চলতি সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম কেজিপ্রতি আরো দুই টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেল ছিল ১৪৭ থেকে ১৪৮ টাকা। গতকাল দোকানিরা দাম চাইলেন ১৪৯ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। খোলা পাম তেল গতকাল বিক্রেতাদের ১৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেল। সপ্তাহখানেক আগেও তিন টাকা কম ছিল। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৩ টাকা লিটার। বড় দানার মসুর ডাল আগের দাম ৮৫ থেকে ৯০ ও ছোট দানার ১০০ থেকে ১১০ টাকা রয়েছে। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা এবং ময়দা ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি করে। খোলা চিনি স্থির রয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়।