আজ ভয়াল ২৫ মে। ভয়াল আইলার ১২ বছর পেরিয়ে গেছে। আইলায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবার এখনও পুনর্বাসিত হয়নি। আশ্রয়হীন জনপদে এখনও চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর খাবার পানির জন্য তীব্র সংকট।
সর্বগ্রাসী আইলা আজও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সংস্কার করা হয়নি উপকূলীয় এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাধ। আইলার পর ওই এলাকায় আসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তাতেও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা।
২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমেষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী-শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদিপশু আর ঘরবাড়ি। গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আইলার আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন। আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। আইলার আঘাত হানার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার থামেনি। দুমুঠো ভাতের জন্য জীবনের সঙ্গে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদেরকে। আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল।
আইলাকবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেঁড়িবাঁধ এখনও ঠিকমতো সংস্কার হয়নি। তার ওপর ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে আবারো লণ্ডভণ্ড হয় উপকূলীয় জনপদ। এরইমধ্যে আবার ওই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর আগমনী বার্তা। এতে উপকূলীয় এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
অথচ ১২ বছর আগেও সবুজ বনানীতে ভরা ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় অঞ্চল। শাকসবজি, ধান, পাট এবং অন্যান্য ফসলে ভরে উঠত পুরো এলাকা। তবে সেই দিন আর নেই। লবণাক্ততায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ওই এলাকা মাটি। চারদিকে গাছপালাহীন মাছের ঘের আর ঘের। সবুজের বালাই নেই। নেই পরিবেশগত ভারসাম্য।
স্থানীয়দের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণসহ সুপেয় পানি ও এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারে সরকার যেন দ্র্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, প্রলয়ংকরী আইলার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও মাথা উঁচু করে দাাঁড়াতে পারেনি। আজও সেখানকার মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব। একইসঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাঁধগুলো রয়েছে ভয়াবহ অবস্থায়। দুই-একটি জায়গায় সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে ভয়াবহ ফাটল। যে কোনো সময় প্রবল জোয়ারের চাপে তা আবারও ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তিনি টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি উদ্যোগে উপকূলীয় এলাকার সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’