’৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার জাতির পিতাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা হলো, হত্যার চেষ্টা হলো। অথচ তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন। একটি পতাকা দিলেন। একটা জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী সবই সীমিত শক্তির মধ্যে গড়ে তুলেছেন। অথচ এদেশের কিছু সংখ্যক মানুষ ষড়যন্ত্র করে কী নির্মমভাবে তাকে হত্যা করল।
আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে ট্র্যাজেডি কামালের জন্য। যে নূর (পলাতক খুনী নূর চৌধুরী) কামালের সঙ্গে ওসমানির এডিসি হিসেবে কাজ করেছে। যখন বাসায় আক্রমণ করে কামাল নিচে বারান্দায় চলে যায়। ও যখন দেখে যে, নূর ও হুদা এক সঙ্গে ঢুকছে, ও তাদের বলে আপনারা এসে গেছেন? খুব ভালো হয়েছে। দেখেন বাসায় কারা আক্রমণ করছে। এই কথা শেষ করতে পারেনি। ওই নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে ওঠে। ওরা ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে হয়ে গেছে!
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের নানা কুৎসা রটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামালের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানো হয়। অথচ সে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করত। বিলাস-বেশনে তার দৃষ্টি ছিল না। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও অর্থের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থ-সম্পদে তার নজরই ছিল না। মায়ের ইচ্ছে ছিল সে যেন পড়াশোনা শেষ করে। সে তখন ক্যাপ্টেন ছিল। মায়ের ইচ্ছায় রিজাইন করে আবার পড়াশোনা করে।
তিনি বলেন, সে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ওয়ার ট্রেনিং নিয়ে ওসমানির (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী) এডিসি হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। তার ছোট পিঠাপিঠি ভাই শেখ কামালের সঙ্গে একত্রে বড় হবার স্মৃতিচারণ করে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, এক সঙ্গে বড় হয়েছি, এক সঙ্গে চলতাম। খেলাধুলা, পড়ালেখা ও ঝগড়াও করেছি। ভালো বোঝাপড়া ছিল আমাদের মধ্যে। যে কোনো কাজে আমার সঙ্গে পরামর্শ করত। একরকম নির্ভর করত আমার ওপর। বাবার স্নেহ থেকে সে বঞ্চিত ছিল। যার কারণে মনে অনেক আক্ষেপ ছিল। আব্বা তাকে আদরও করতেন বেশি। কামালের অনেক গুণ ছিল। সে যে কাজেই হাত দিত, সেখানে তার মেধার স্বাক্ষর রেখে আসত। কামাল সেতার বাজানো শিখতো, সে চর্চা সে রেখে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৪ জুলাই কামালের ও ১৭ জুলাই জামালের (শেখ জামাল) বিয়ে হয়। আমরা যাচ্ছিলাম বাইরে (শেখ হাসিনার স্বামীর কর্মস্থলে জার্মানি), জিজ্ঞাসা করলাম তোমার জন্য কী আনব? বলল, আমার জন্য না, আমার আবাহনীর খেলোয়াড়দের জন্য বুট নিয়ে এসো। তখন ডায়েরিতে নামটাও লিখে দেয় এডিডাসের বুট। সেখান থেকেই বোঝা যায় তার নিজের জন্য কিছুর আগ্রহ ছিল না।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট যদি এই বাঙালির জীবনে না ঘটতো, তাহলে বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতো। এই হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, যদিও সেটা টিকে নাই। তখন চক্রান্তটা কোথায় কীভাবে হয়েছিল, এখন এটা বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। আর কতটুকু বিশ্বাসঘাতকতা এটাও মানুষ নিশ্চয়ই উপলব্ধি করে।