1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বতী আমলেও আইন মন্ত্রনালয়ে আওয়ামী কামড়া-কামড়ি, দখল-বেদখল

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সরকার বদল হলেও আইন মন্ত্রনালয়ে আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম্য কমছেই না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনুসারীদের কিছু না বলে চলে যাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনার বৃহৎ প্লানের অংশ। হাসিনা জানতো তার অনুসারীরা কেউ কেউ অপকর্মের জন্য মারধরের শিকার হবে, কেউ কেউ পলাতক হবে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই হাসিনার পোষ্যপুত্ররা, খুনী গোষ্ঠি, সন্ত্রাসী, টাউট বাটপার, দূর্নীতিবাজরা ঠিকই জায়গা করে নিবে। হাসিনার বর্তমান স্পেসিফিক মিশন হলো কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া। র-এর সহায়তায় টপ লেভেলের বিশ্বস্ত সহযোগিরা যোগাযোগ রাখছে হাসিনার সাথে এবং হাসিনার নির্দেশনা রুট লেভেল পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে গোপন চ্যানেলে। তাদের ভেতরের কয়েকটি সোর্স নিশ্চিত করেছে যে, হাসিনার আপাতত টার্গেট স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ, আইন ও বিচার, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ও মিলিটারি। তারা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে নিয়মিত বৈঠক করে মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ও মন্ত্রনালয়ের বাইরে। আনসার ক্যু ব্যর্থ হওয়ায় আনসার ইস্যুকে হাসিনা প্লান থেকে বাদ দিয়েছে। হাসিনার মিশন বাস্তবায়নে সহায়তা করছে র-এর এই দেশীয় পেইড এজেন্টরা। সাংবাদিকতার ব্যানারে র-এর অনেক সোর্স বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ঘুরে ঘুরে ডাটা সংগ্রহ করছে।

হাসিনার মাস্টার প্লানের প্রথম কাজ হলো, তার সবচেয়ে অনুগত লোকদের প্রতিষ্ঠান প্রধান করা। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান ঝরে পরলে বিকল্পজনকে প্রতিষ্ঠান প্রধান করা। প্রতিষ্ঠান প্রধান বানানোর জন্য বস্তা বস্তা টাকা ঢালতেও পরোয়া নেই। ইতোমধ্যেই ১০০ কোটি টাকায় হাসিনার প্রোডাক্ট সেট হয়েছে মেজর জেনারেল (অব) সিদ্দিকুর রহমানকে, চাকরিচ্যুতির পরপরই রাজউকের চেয়ারম্যান পদে পূণরায় বসিয়ে। একই ভাবে হাসিনার রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত এইচটি ইমামের ভায়রা জায়নুল বারীকে চুক্তি হারানোর ৬ দিনের মাথায় ফের সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে। হাসিনাকে স্বৈরাচার বানানোর আরেক কারিগর বিকাশ কুমার সাহা টাকার বস্তা দিয়েছে বগুড়ায় বাড়ী বিএনপি গুলশান অফিসের দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালীর ব্যক্তিকে। নগদ ক্যাশের বিনিময়ে বিকাশের বিপদ কমে গেছে।

কোটি কোটি টাকায় একজনকে প্রতিষ্ঠান প্রধান সেট করার পর তার উপরে দায়িত্ব আওয়ামীলীগের বিশ্বস্ত সহযোগীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সেট করা। বিএনপি ও জামাতপন্থী ঘুসখোররা আওয়ামীলীগকে অতি অল্প দামে প্রমোট করে চলছে। আওয়ামী আধিপত্য যাতে বেশী দৃষ্টিগোচর না হয় সেই বিষয়েও সতর্ক এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূর্বল টাইপের কিছু অফিসারকে সেট করে নিরপেক্ষতার ব্যালেন্স দেখানো হচ্ছে। জামাত শিবির করা অফিসারদের প্রমোট করে জায়গায় জায়গায় পদ ব্লক করা ও দ্বন্দ্ব তৈরি করাও আওয়ামী পরিকল্পনার অংশ।

আইন মন্ত্রনালয়ে বর্তমান সময়ে চলছে সবচেয়ে বেশী নৈরাজ্য। হাসিনার দুই বিশ্বস্ত গোলামের একজন সাবেক আইন সচিব গোলাম সারোয়ার অসন্তোষের মূখে ওএসডি হলে সচিব পদে জায়গা করে নেয় হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছোট ভাই শেখ জামালের বন্ধু গোলাম রাব্বানী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ী গোলাম রাব্বানীর চেয়ে হাসিনার বিশ্বস্ত কেউ বিচার বিভাগেতো বটেই, কোন সার্ভিসেই নেই। রাব্বানী বিগত ১৬ বছর একটানা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বসে হাসিনাকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে স্বৈরাচারী দানবে পরিণত করেছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কুসুম কুসুম আওয়ামী বিরোধিতা করলেও আর আশ্রয় প্রশ্রয়ে আওয়ামীরা চামড়া বাঁচাচ্ছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পাচ্ছে, চেয়ার বাঁচাচ্ছে। নানা অপকর্মের অন্যতম সহায়তাকারী হলো বিচারাঙ্গনের কুলাঙ্গার খায়রুল হকের সাবেক পিএস মাসুমকে নিজের পিএস বানিয়ে দরকার মত ব্যবহার করছে। এর দ্বারা প্রাক্তন ঘাদানিক আসিফ নজরুলের নিয়ন্ত্রন করা ও ব্যালেন্স করা দুটোই হচ্ছে, সমানতালে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবীর চলছে।

কেবল আসিফ নজরুলের পিএসই নয়, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পিএস জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের ঘাড়ে। যেমন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পিএস নাসির ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের এবং বস্ত্র পাট মন্ত্রী মির্জা আজমের পিএস ছিলেন। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানার পিএস মারুফ স্বৈরাচারের মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হোসেনের পিএস ছিলেন।

তসবিহ, পট্টি আর রাতভর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার প্রচারনা চালানো ভন্ড স্বৈরাচার হাসিনা এবং শামীম ওসমানদের প্রশিক্ষনের ফসল লেবাসধারী গোলাম রাব্বানীকে বানানো- হয়েছে আইন সচিব। মন্ত্রনালয়ে বসেই রাব্বানী তছনছ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের পোস্টিং সহ বিভিন্ন টায়ার। আইন মন্ত্রনালয়, হাইকোর্ট, ঢাকা ও ঢাকার আসে পাশে ঘুরে ফিরে জায়গা করে নিয়েছে পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী জজ সাহেবরা। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই জুডিসিয়াল ক্যু করে অবৈধ ঘোষণা করার চেষ্টা করা দোসরদের যেখানে থাকার কথা জেলখানায়, তাদের পেছনে আরো কে কে আছে উদঘাটন করতে মামলা দিয়ে তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া দরকার, অথচ তারা দিব্বি চাকুরি করছে, আর নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। এদেরকে প্রটেকশন দিচ্ছে হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ভাই দাবীদার আইন সচিব গোলাম রাব্বানী, যাকে ২০২৪ সালে হাসিনা ইন্ডিয়া সফরে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করাতে নিয়ে গিয়েছিল।

রাব্বানী সচিব পদে বসে খুব সচেতন ভাবে আইন মন্ত্রনালয়ে সেট করেছে হাসিনার একাধিক বিশ্বস্ত সহযোগীকে, যার মধ্যে অন্যতম সিনিয়র জেলাজজ পদমর্যাদার এরশাদুল আলম৷ বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় আইন মন্ত্রনালয়, হাইকোর্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করে এরশাদুল আলম স্বৈরাচারী হাসিনাকে ক্ষমতা পোক্ত করতে নানারকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে। দুইটি জেলার জেলাজজ তথা নারায়ণগঞ্জের মতো ঢাকার গা-ঘেষা গুরুত্বপূর্ণ জেলার জেলাজজ হওয়া স্বৈরাচার আমলে হাসিনার বিশ্বস্ত না হলে সম্ভব নয়। এরশাদুলের বিষয়ে এটাও জানা যায় যে, হাসিনার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও লেনদেনের নিরাপদ মাধ্যম হিসাবে কিছুদিন কাজ করেছে এরশাদুল। তৌফিকা করিমের কাছে এককালীন কোটি টাকা, মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা ও বড় মামলায় নির্দেশমত আদেশ দেয়ার শর্তে ভাল পোস্টিং নেয়া অফিসাররা এমনকি বিচারপতিরাও প্রত্যেকে দিব্বি অফিস করছে এখনও। স্বৈরাচারের সহযোগী এরশাদুল আলমের থাকার কথা পলাতক অথবা জেলখানায় অথবা সবচেয়ে দুরবর্তী স্টেশনে, অথচ অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে স্বৈরাচারের এই সহযোগী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত হওয়াদের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে আইন মন্ত্রনালয়ে বসে। স্বৈরাচারের দোসরদের উৎপাত আইন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। লুটপাট, দখলবাজ আওয়ামীলীগাররা বেশীদিন তাদের বৈশিষ্ট্য লুকাতে পারে না।

স্বৈরাচারের সহযোগী এরশাদুল আলম মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেই আওয়ামী চরিত্র বের করে ফেলে। গত ২৫/০৯/২০২৪ তারিখ বিকাল বেলা এরশাদুল আলম দলবল নিয়ে মন্ত্রনালয়ের আরেক ছাত্রলীগার যুগ্ম জেলাজজ মাসুদ পারভেজ তথা আইন সচিবের পিএসের রুম দখল করে নেয়। রুম বরাদ্দের সরকারী অনুমোদন ছাড়া গায়ের জোরে রুম দখল করার আওয়ামী স্টাইল ও দূঃসাহসে পুরো মন্ত্রনালয় হতবাক। এই ঘটনা স্পষ্টত ফৌজদারি অপরাধ। এই ঘটনায় মারামারির পর্যায় পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও স্টাফদের হস্তক্ষেপে মারামারি হয়নি। এরশাদুল আলমকে প্রশ্রয় দিচ্ছে হাসিনার ভাইখ্যাত সচিব গোলাম রাব্বানী। তাই অনুমোদন বিহীনভাবে জোরপূর্বক রুম দখল করে ফৌজদারি অপরাধ করার পরেও ফৌজদারি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি এরশাদুলের বিরুদ্ধে। এই অপরাধের বিচার না হলে মন্ত্রনালয়ে কোন শৃঙ্খলা থাকবেনা। শৃংখলা ফেরাতে ও চাকুরীরত আওয়ামী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে এই ঘটনায় কর্মচারীদের পহ্ম থেকে ফৌজদারি মামলা করার জন্য ইতোমধ্যে মিটিং হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।

একনায়ক হাসিনার পতন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কিন্তু দূঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রনালয়ের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের দখল নিয়েছে হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্তরা। জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানির ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটে চলছে। অর্জিত বিজয়ের প্রায় মৃত্যু ঘটেছে আইন মন্ত্রনালয়ে। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে এই আন্দোলনের দাফন কাফন সম্পন্ন হয়ে যেতে খুব বেশী দেরী হবে না হয়তো।

রাষ্ট্রে একা একা একজন ব্যক্তি কখনই স্বৈরাচার হতে পারে না। অনেকগুলো ছোট, মাঝারি, বড় সাইজের স্বৈরাচারের গুম, খুন, দূর্নীতি, লুটপাট, জেল জুলুম, স্বাধীনতা হরণ, গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ধংস করার সবগুলি কাজের যোগফল হলো একটি স্বৈরাচার। একজন স্বৈরাচারের অপরাধের চেয়ে স্বৈরাচারের কারিগরদের অপরাধের দ্বিগুণ শাস্তি হওয়া উচিত। বিগত ১৫ বছরে হাসিনা বিভিন্ন সেক্টরে সেট করেছে পুরো স্বৈরাচার টিম। একজন গেলে পরের জনও স্বৈরাচার তার পরেরজনও স্বৈরাচার। যুদ্ধবিধ্বস্তের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি পার করছে দেশ। হাজার মৃত্যু, অগনিত আহত, লাখ লাখ ব্যক্তি প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভিকটিম। দেশ, অর্থনীতি ও লুটপাটের ভিকটিম কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। বর্ডারের ওপারে বসে হয়তো বা মুচকি হাসছে স্বৈরাচারী হাসিনা। হয়তো বলছে, ১৫ বছরে বুড়ো থেকে গুড়া সব সেট করে রেখে গেছি কয়টা বাদ দিবি। শত শত র-এর পেইড এজেন্ট তৈরি করে রেখেছে। ভোল পাল্টে টিকে থাকা এবং অবস্থান তৈরি করে নেয়া স্বৈরাচারের সহযোগীদের কৌশল মাত্র। তাদের ষড়যন্ত্রের এখনই না রুখতে পারলে ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় অচিরেই ধংস হয়ে যাওয়ার চরম আশঙ্কা রয়েছে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব