দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সুখবর দেওয়ার পরই উল্টো স্বামীর দেওয়া তিন তালাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় গৃহবধূ, এখন দিশেহারা। শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের এক ধরনের ফতোয়ায় ওই নারী এখন ৬ বছরের ও এক মাস বয়সের কন্যাসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে। বিচারের আশায় এলাকায় ধরনা দিলেও কেউ সুবিচার করতে এগিয়ে আসেনি। ওই নারীর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশল্লী ইউনিয়নের উত্তর মুশল্লী গ্রামে।
তিনি জানান, গত প্রায় ৯ বছর আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁর বিয়ে পাশের সিংরইল ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে রুবেল মিয়ার (৩০) সাথে। স্বামী ঢাকার মিরপুর এলাকায় জনৈক এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেট গাড়ি চালক। এই সুবাদে বিয়ের পর তাঁকে নিয়ে যায় ঢাকায়। সেখানে অবস্থানকালে কয়েকমাস পর জানতে পারে স্বামী ইতিপূর্বেও আরেকটি বিয়ে করেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের সম্মুখীন হন তিনি। একপর্যায়ে কাঁচপুর এলাকায় একটি পোশাক কারাখানায় চাকরি নেন।
সোলেমা জানান, স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি কর্মস্থল কাঁচপুর এলাকাতেই একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। একসময় স্বামী অনুনয়-বিনয় করে তার সাথেই অবস্থান করে। জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তানের। তখন বাড়ি থেকে টাকা এনে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। অন্যথায় তালাকের হুমকি দেয়। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বিধবা মায়ের কাছ থেকে অনেক কষ্টে কিছু টাকা এনে দেন স্বামীকে। একপর্যায়ে থেমে থেমে প্রায়ই টাকা এনে দেওয়ার কথা বললে তাঁর কাছে জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে ফের নির্যাতনের মাত্রা বাড়ালে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এখানেই গত জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে জন্ম নেয় আরেক কন্যাসন্তানের।
সোলেমা আরো জানান, শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে সন্তান জন্মের খবর পেলেও তাঁকে ফোন করে কোনো খোঁজখবর নেয়নি। উপরন্তু নবজাতককে অন্যত্র দত্তক দেওয়ার জন্য বলে দেয় শাশুড়িসহ অনেকেই। দত্তক দেওয়ার কথা না মানায় স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে চলে যেতে চাপ দেয়। এর মধ্যে তিনি গত ১৯ জানুয়ারি সকালে ফোন করে সন্তানের খবর দিলে অকথ্য গালিগালাজ করে আর ফোন না দেওয়ার হুমকি দিয়ে সম্পর্ক রাখবে না বলেই পরপর তিন তালাক বলে দেয়। সোলেমা জানান, এ ঘটনা শোনার পর তিনি স্বামীকে অনুরোধ করেন তার এ কথা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু এরপর থেকে আর ফোন রিসিভ করেনি স্বামী রুবেল।
রুবেল মিয়া বলেন, আপনেরে কেলা কইছে তালাক দিছি। আপনের কাছে প্রমাণ আছে। ‘আপনার স্ত্রী অডিও রেকর্ড শুনিয়েছেন এবং আমার কাছে জমাও দিয়েছেন’ জানালে উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি তার কাছে ২৫ হাজার টাকা পাই। চাইলে সে কয় আমার সংসার করতো না। অহন কি জোর কইর্যা সংসার করান যাইব?