1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

মানুষ জেনে শুনেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১

দক্ষিণখানের বাসিন্দা সোহেল মাহমুদের কাছে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মশার কামড়। তাই তো মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে দুই প্যাকেট কয়েল কিনলেও মানের দিকে নজর নেই তার। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন আছে কিনা তাও দেখেননি। সোহেলের কাছে কয়েলের ধোঁয়ায় মশা মরলেই যেন স্বস্তি। কয়েলে ধোঁয়ায় মশার কামড় থেকে স্বস্তি ফিরলেও মানব দেহে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে নজর নেই মানুষের।

ফার্মগেট, উত্তরা, দক্ষিণখান, শনিরআখড়া ও মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষ মশার কয়েল কিনলেও মান নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই। অধিকাংশ ক্রেতা কয়েলের ধোঁয়ায় মশা তাড়ানোর দিকে। এসব ক্রেতা কয়েলের ধোঁয়ার ক্ষতির দিক জানলেও বাজারে নিম্নমানের কয়েলের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। আর এসব মানহীন মশার কয়েল প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গড়ে উঠেছে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনবিহীন মশার কয়েল তৈরির কারখানা।

দক্ষিণখানে সিরাজুল স্টোর নামে মুদির দোকানে এসে সোহেলের জিজ্ঞেসা- যে কয়েলে মশা বেশি মরে সেই কয়েল তার প্রয়োজন। দোকানদার সিরাজুল আলীও বেশি লাভের আশায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন ‘লামিয়া সুপার’ মশার কয়েল বের করে দেন। শুধু দোকানী সিরাজুল আলী কিংবা সোহেল নয় সারাদেশে লাখো মানুষ নিম্নমানের কয়েল কিনছেন। দক্ষিণখানের আংশিক এলাকা কয়েক বছর আগে উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হলেও এই এলাকার বাসিন্দারা মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা। দক্ষিণখানের মতোই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দারা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এ সুযোগে এসব এলাকায় নিম্নমানের মশার কয়েলের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে।

মানহীন কয়েল ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালিতে প্রদাহ, ক্যান্সার হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ শিশুদেরও বিকলাঙ্গতাসহ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কয়েলের ধোঁয়ার এসব ক্ষতির দিক জানার পরেও যাত্রাবাড়ী এলাকার ইলিয়াস খান নিম্নমানের মশার কয়েল কিনছেন। ইলিয়াস খান বলেন, মশার কামড়ের যন্ত্রণা থেকে আগে রক্ষা পাই এরপর দেখা যাবে স্বাস্থ্যের দিকে। কিছু মশার কয়েল বাজারে রয়েছে সেগুলো জ্বালালে মশা কয়েলের উপরে এসে বসে নাচানাচি করে। এজন্য যে কয়েলে মশা বেশি মরে সেটি কিনেছি। কারণ মশার কামড়ে রাতে ঘুম হয় না।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আমিমুল এহসান বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে বাজার ও গোডাউন থেকে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন মশার কয়েল জব্দ করা হচ্ছে। মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ মশার কয়েল জব্দ করে জড়িতদের জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন মশার কয়েল দূর করতে প্রশাসনের কড়াকাড়ি নজরদারি থাকায় ঢাকার আশেপাশ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাইনবোর্ড সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে অবৈধ কারখানা গড়ে উঠেছে। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে অতি গোপনে দিনে ও রাতে মশার কয়েল তৈরি করা হচ্ছে।

আইন অনুযায়ী বালাইনাশক অধ্যাদেশ- (পেস্টিসাইড রুলস ১৯৭১ ও ১৯৮৫) অনুসারে, মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অধ্যাদেশ অনুযায়ী- অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর পাবলিক হেলথ প্রোডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারাত্মক ক্ষতিকর কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ৩০/৩৫টি দেশীয় বেনামি কারখানা। ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করে আকর্ষণীয় মোড়কে এসব কয়েল বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে উচ্চমাত্রার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টে সম্পন্ন চায়না কয়েল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মানহীন মশার কয়েল নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কড়াকড়ি মনিটরিং করতে হবে। আর এসব কারখানা কোথায় কোথায় গড়ে উঠেছে তা খুঁজে বের করে সিলগালা করে দিতে হবে। মানহীন কয়েল মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিকর। বাজারে সরবরাহ করা কয়েলে ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার কতটুকু করা হচ্ছে তা দেখতে হবে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব