মাঘের শেষ আজ বুধবার কুয়াশার চাদর মোড়ানো সকাল থেকে পোড়াদহের মেলায় কেনা কাটার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়ে মানুষ। বাংলাদেশে গ্রামীন মেলা মানেই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠা।মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।
সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাধভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে। আর বগুড়ার পোড়দহের দেশের মধ্যে সব চেয়ে বৃহৎ মেলা মনে করা হয়। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’। কথিত আছে প্রায় ৪০০ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।
পোড়াদহের মেলা মুলত মাছে জন্য বিখ্যাত। রকমারি জাতের মাছ এ মেলার প্রধান আকর্ষণ। বুধবার ভোররাতের আগেই আড়তে আনা হয় বড় আকারের মাছগুলো। বাঘাইড়, রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এ মেলায় উঠেছে।
মাছের মেলায় সকাল থেকে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাক।কে কত বড় মাছ কিতে পারে চলে প্রতিযোগিতা।.এবার মেলায় ঊঠেছে ২০ কেজি ওজনের কাতলা, ৪০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ । দলে দলে জামাইরা মাছ কিনে ফিরছে শশুর বাড়ি। সর্বচ্চো ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি।
নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের দাওয়াত করা হয়। মেলার আগের ২/১ দিন আগে থেকে পোড়াদহে বাড়ি মেয়ে জামাই. বউরা এসে সমবেত হন। মেলার দিনে এই অঞ্চলে ঈদ উৎসব চলতে থাকে।মেয়ে-জামাই বউ-ঝি সকলে. বৃদ্ধ থেকে শিশু নতুন সাজে সেজে থাকেন। পরদিন একইস্থানে বসবে বউমেলা। বুধবার মেলা মাছ ছাড়াও বিশাল আকৃতির মিষ্টি, খাবার সামগ্রী, খেলা দোকান বসেছে। আনন্দ বিনোদনের জন্য নাগারদোলা , পুতুল নাচ এসেছে মেলায়। বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
প্রায় ৪০০ বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।
প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন।
আরও পড়ুন...