এক সেশনে ৩ উইকেট, সেশনটি তাই হওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু সেটি বলার জো নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে রান তুলে ফেলেছে ১১৪! চার-চারটি সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই ফলো অন এড়ানোর পথে।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫ উইকেটে ১৮৯। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪৩০।
দিনের প্রথম বলে উইকেট নিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আলগা বোলিং আর ক্যারিবিয়ানদের প্রতি আক্রমণ মিলিয়ে লড়াই জমে ওঠে লড়াই।
উইকেটে টার্ন মিলেছে আগের দুই দিনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বিপজ্জনক কিছু ডেলিভারির পাশাপাশি বেশ কিছু আলগা বলও করে চাপ সরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। প্রথম সেশনেই ক্যারিবিয়ানদের ব্যাট থেকে চার এসেছে ১৮টি, ছক্কা ১টি। প্রায় সবগুলোই বাজে বলে।
শেষ পর্যন্ত থিতু দুই ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও কাইল মেয়ার্সের উইকেট নিতে পারে বাংলাদেশ। ৭৬ রানে ফেরেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট, ৪০ রানে অভিষিক্ত মেয়ার্স।
তবে চারটির সুযোগও হয় হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। দুটি ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার লিটন দাস, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দুটি পারেননি বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি চৌধুরি।
ইয়াসির ফিল্ডিং করছেন সাকিব আল হাসানের বদলে। আগের দিন কুঁচকিতে টান লাগায় এ দিন মাঠেই নামতে পারেননি সাকিব। বোলিংয়ে তার অভাব কিছুটা অনুভব করেছেন দল, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ক্ষেত্রে।
২ উইকেটে ৭৫ রান রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন গড়া ব্র্যাথওয়েট ও এনক্রুমা বনারের ৫১ রানের জুটি নতুন দিনে এগোতে পারেনি এক ধাপও। তাইজুল ইসলামের করা দিনের প্রথম বলেই বনার ক্যাচ দেন ম্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।
শুরুতে দুইবার জীবন পেলেও উইকেটে টিকে গেছেন ব্ল্যাকউড।শুরুতে দুইবার জীবন পেলেও উইকেটে টিকে গেছেন ব্ল্যাকউড।ওই ওভারেই ধরা দিতে পারত আরেক উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান মেয়ার্স সুযোগ দেন তৃতীয় বলেই। কিন্তু উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন। তার কাছ থেকে ফসকে আসা বল প্রথম স্লিপে লুফে নিতে পারেননি শান্তও।
এরপর বাংলাদেশের বাজে বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে অভিষিক্ত মেয়ার্স খেলতে থাকেন একের পর এক শট। রানের চাকাও ঘুরতে থাকে দ্রুত। ৪৯ রানে দিন শুরু করা অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটও এগোতে থাকেন স্বচ্ছন্দে।
আগের দিন দারুণ বোলিং করা মুস্তাফিজুর রহমান ২ ওভারে দেন ১৮ রান। তাইজুল, নাঈম হাসানরাও শর্ট বল করেন প্রচুর। ব্র্যাথওয়েট-মেয়ার্স জুটির পঞ্চাশ আসে ৬৫ বলেই।
শেষ পর্যন্ত দারুণ টার্নিং এক বলে এই জুটিতে ৫৫ রানে থামান নাঈম। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা বল তীক্ষ্ণভাবে অনেকটা টার্ন করে ঢোকে ভেতরে। অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দেন ব্র্যাথওয়েট। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক থামেন ১২ চারে ১১১ বলে ৭৬ রান করে।
এরপর নতুন ব্যাটসম্যান জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে ফেরানোর দুটি সুযোগ পায় বাংলাদেশ। শূন্য রানেই নাঈমের বলে তার ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন। নাঈমের বলেই ২ রানে শর্ট লেগে ক্যাচ নিতে পারেননি বদলি ফিল্ডার ইয়াসির।
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করার পর বোলার নাঈম হাসানকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাসক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করার পর বোলার নাঈম হাসানকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাসব্ল্যাকউডকে আর লাঞ্চের আগে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। অপরাজিত তিনি ৩৪ রান। তবে দারুণ খেলতে থাকা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ দিন নিজের প্রথম ওভারেই এলবিডব্লিউ করে দেন মেয়ার্সকে (৪০)।
সাতে নামা কিপার ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভাকেও দ্রুত ফেরাতে পারতেন মিরাজ। কিন্তু এবারও ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে আপাত সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি ইয়াসির। বরং তাইজুলের শর্ট বলে ছক্কা মেরে জশুয়া বাড়িয়ে নেন আত্মবিশ্বাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন লাঞ্চ পর্যন্ত):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৭৫/২) ৬২ ওভারে ১৮৯/৫ (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, বনার ১৭, মেয়ার্স ৪০, ব্ল্যাকউড ৩৪*, জশুয়া ১২*; মুস্তাফিজ ১০-২-৩৬-২, সাকিব ৬-১-১৬-০, মিরাজ ১৪-৬-৩১-১, তাইজুল ১৮-৪-৬০-১, নাঈম ১৪-১-৪৫-১)।