বলিউড তারকা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার রহস্যের জট ক্রমেই খুলছে। এই মামলায় ধরা পড়েছেন ৩০ বছর বয়সী শরিফুল ইসলাম শেহজাদ মুহাম্মদ রোহিলা আমিন ফকির। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত বাংলাদেশের নাগরিক। আজ ভোরবেলায় অভিযুক্তকে সাইফ-কারিনার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে সাইফের ওপর হামলার ঘটনাটি ‘পুনর্নির্মাণ’ করতে শরিফুলকে বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে গিয়েছিল বান্দ্রা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ কাকভোরে অভিযুক্তকে সাইফ-কারিনার বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। এক ঘণ্টা পর পুলিশ সেই হামলাকারীকে সঙ্গে নিয়ে এই বলিউড দম্পতির বাসা থেকে বের হয়েছিল। তার আগে হামলার পর যেখানে যেখানে শরিফুল থেমে ছিল, সেখানে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল মুম্বাই পুলিশ। বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনের পুলিশ এখন শরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিকেল চারটা নাগাদ অভিযুক্তকে বান্দ্রা পুলিশ স্টেশন থেকে বার করা হয়েছিল তদন্তের জন্য।
সাইফের ওপর যে ছুরি হামলা করা হয়েছিল, তার তৃতীয় টুকরা খুঁজে বার করার জন্য পুলিশ স্টেশনের বাইরে আনা হয়েছিল তাঁকে। পুলিশি তদন্তে সামনে এসেছে, শরিফুল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানাতে চেয়েছিলেন। তাই চুরি করে তাড়াতাড়ি উপার্জন করার রাস্তা বের করেছিলেন অভিযুক্ত। কিন্তু পরে তাঁর পরিকল্পনা বদলে যায়।
এক ডান্স বারে কাজ করতেন শরিফুল। সেখানে গিয়ে পরিকল্পনা বদলান। তিনি ভেবেছিলেন অনেক টাকা রাতারাতি উপার্জন করে বাংলাদেশে আবার ফিরে যাবেন। আর তাই বান্দ্রার অভিজাত এলাকাকে বেছে নিয়েছিলেন অভিযুক্ত।
শরিফুল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি চুরি করার উদ্দেশ্যেই সাইফ-কারিনার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন। অভিযুক্তের দাবি, তিনি জানতেন না এটা কোনো তারকার বাসা। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে যে সাইফ-কারিনার চার বছরের ছেলে জেহকে পণবন্দী করে এক কোটি টাকা আদায় করাই শরিফুলের মূল উদ্দেশ্য ছিল। কারণ, মোটা অঙ্ক রাতারাতি কামিয়ে তিনি নিজের দেশ বাংলাদেশে ফিরতে চেয়েছিলেন।
বাংলাদেশে ফেরার জন্য হামলাকারীর বড় অঙ্কের প্রয়োজন ছিল। এই হামলার অন্যতম সাক্ষী সাইফের বাসার ৫৬ বছরের নার্স এলিয়ামা ফিলিপ পুলিশকে জানিয়েছেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জেহর বিছানার দিকে এগোচ্ছিল। এলিয়ামা জানিয়েছেন, বাধা দিতে গেলে তাঁর ওপর দুষ্কৃতকারী লাঠি ও ব্লেড দিয়ে আক্রমণ করেছিল। আততায়ীর সঙ্গে চিৎকার–চেঁচামেচিতে জেহর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।
জেহ ছুটে ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। সবার হইচই শুনে ছুটে এসেছিলেন সাইফ। এরপর আততায়ীর সঙ্গে সাইফের হাতাহাতির কথা সবারই জানা। জানা গিয়েছে যে সাইফ আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার পর সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। আর হামলাকারীকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিলেন সাইফ। কিন্তু যে পথ ধরে এসেছিলেন, সেই পথ ধরেই পালিয়ে যান তিনি।
পুলিশের ভাষ্য অনুসারে, মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ সাত মাস আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। মেঘালয়ের ডাউকি নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন শরিফুল। পশ্চিমবঙ্গের কারও আধার কার্ড ব্যবহার করে সিমকার্ড নিয়েছিলেন অভিযুক্ত। এরপর মুম্বাইয়ে শরিফুল কাজের খোঁজ করছিলেন। মুম্বাইয়ে আসার পর শরিফুল নিজের নাম বদলে বিজয় দাস রেখেছিলেন। অভিযুক্তের ব্যবহার করা সিমকার্ডটি খুকুমণি জাহাঙ্গীর সেখার নামে বলে জানা গেছে। শরিফুল নিজের আধার কার্ড বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি। পুলিশ অভিযুক্তের মুঠোফোন তদন্ত করে জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের বেশ কিছু নম্বরে ফোন করেছিলেন শরিফুল। তাঁর পরিবারের সঙ্গে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন অভিযুক্ত।
এদিকে পাঁচ দিন ধরে লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাইফ। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর প্রথম দিন তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরের দিন স্পেশাল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সাইফকে।